শেখ হাসিনার মামলা: আপ বাংলাদেশের জুনায়েদের জেরা আগামী সোমবার

শেখ হাসিনার মামলা: আপ বাংলাদেশের জুনায়েদের জেরা আগামী সোমবার ছবি: বিজনেস ডেইলি

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৮:২৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

বর্তমানে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ-এর জেরা চলছে। এ জেরা অব্যাহত রেখে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আগামী সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এর নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ সিদ্ধান্ত দেন। অন্য সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সেদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জুনায়েদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তবে জেরা সম্পন্ন না হওয়ায় শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

এই মামলায় ৪৮ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন জুনায়েদ। তিনি তার বক্তব্যে ২০১৩ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত বিস্তৃত ঘটনার বর্ণনা দেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষে সেদিন শুনানি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহসহ আরও অনেকে।

এদিন বেলা ১১টার পর দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রাইব্যুনালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় তার জেরা শেষ হয়।

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর নাহিদ ইসলাম ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন। দুপুরে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে বিরতি দেওয়া হয়। বিরতির পর বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় বাকি অংশ আজ সম্পন্ন করা হয়। এরও আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রথম দিনের মতো তিনি জবানবন্দি দেন। একই দিন সকাল পৌনে ১১টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও জেরা করেন আমির হোসেন।

এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের ১৯তম কার্যদিবস পর্যন্ত মোট ৪৮ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরও তিনজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেবেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর। আদালতে তিনি স্বীকার করেন যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশেই গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এ সময় তিনি ক্ষমাও প্রার্থনা করেন এবং অজানা অনেক তথ্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন।

মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী আন্দোলনের সময় হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে।

এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগনামা মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র রয়েছে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠায়, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠায় এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায়। সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement