আমাদের অনেকেরই জীবনের কোনো না কোনো মুহূর্তে হাত-পায়ে ঝিনঝিনে অনুভূতি বা ‘সুঁই ফোটার মতো’ অস্বস্তি দেখা দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় পারেসথেসিয়া।
এটি কখনো কয়েক মুহূর্তের জন্য সাময়িকভাবে হতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ীভাবেও দেখা দিতে পারে। তবে এ ধরনের ঝিনঝিনে ভাব যদি নিয়মিত দেখা দেয় বা দীর্ঘদিন ধরে দূর না হয়, তাহলে তা বড় ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
কেন হয় এই ঝিনঝিনে ভাব?
চিকিৎসকদের মতে, হাত-পা ঝিনঝিন করার পেছনে যেসব কারণ বেশি দেখা যায়, সেগুলো হলো—
-
দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকা বা শুয়ে থাকা
-
ডায়াবেটিস, ভিটামিন বি-১২ বা ভিটামিন ই–এর ঘাটতি
-
অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপানের অভ্যাস
-
স্নায়ুর ক্ষতি বা মেরুদণ্ডের ডিস্ক সরে গিয়ে স্নায়ুতে চাপ পড়া
-
হাতের কবজিতে কারপাল টানেল সিনড্রোম
-
বিভিন্ন সংক্রমণ বা অটোইমিউন রোগ, যেমন—লুপাস কিংবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
-
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS)
-
রক্ত সঞ্চালনের সমস্যাজনিত রোগ, যেমন রে’নড ডিজিজ
করণীয় কী হতে পারে?
এই উপসর্গের সমাধান মূলত নির্ভর করে এর প্রকৃত কারণের ওপর। তবে সাধারণভাবে যে বিষয়গুলো মানা যেতে পারে—
-
ডায়াবেটিস বা যেসব দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা
-
ভিটামিন ঘাটতি থাকলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূরণ করা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
-
প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি গ্রহণ, আর দরকার হলে সংশ্লিষ্ট ওষুধ বা সার্জারি
-
দীর্ঘ সময় একটানা একইভাবে বসে না থাকা ও মাঝে মাঝে অবস্থান পরিবর্তন করা
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন?
-
ঝিনঝিনে ভাব যদি বহুদিন স্থায়ী হয় বা দিন দিন বেড়ে যায়
-
সঙ্গে ব্যথা, দুর্বলতা, অবশ ভাব বা নড়াচড়া করতে সমস্যা দেখা দিলে
-
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নতুন করে এই উপসর্গ শুরু হলে
চিকিৎসকদের মতে, সময়মতো সঠিক কারণ শনাক্ত করা গেলে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোপুরি সেরে ওঠাও যায়।

































