শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ: ট্রাইব্যুনালের রায়

শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ: ট্রাইব্যুনালের রায় ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৫:৪৭, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর বেঞ্চ, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার, দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে তিনটি অভিযোগই পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে টিকে গেছে। এর মধ্যে একটি অভিযোগে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং বাকি দুই অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা, পাশাপাশি জুলাই–আগস্টের ঘটনার নিহতদের কয়েকজন পরিবারের সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত এ ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রথম যে মামলা আসে, সেটি ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা। এরপর গত বছরের ১৭ অক্টোবর মামলার বিচারকার্য শুরু হয় এবং সেদিনই আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়। মামুন আদালতে দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে বিস্তৃত জবানবন্দি দেন। তিনজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে—উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা এর মধ্যে রয়েছে।

মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষীর তালিকা থাকলেও সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। চলতি বছরের ৩ আগস্ট থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ আদালতে জুলাই–আগস্টের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরেন। এরপর ৮ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা সম্পন্নের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়।

২৩ অক্টোবর প্রসিকিউশন ও রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়। এর পরদিন ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়।

এদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘিরে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাতে কোনো ধরণের নাশকতা বা সহিংসতা ঘটাতে না পারে সেজন্য রোববার থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা জারি রয়েছে। কেউ ককটেল বিস্ফোরণ, আগুন দেওয়া বা জ্বালাও–পোড়াওয়ের চেষ্টা করলে আইনসঙ্গতভাবেই তাদের বিরুদ্ধে গুলি ছোড়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement