১২৭ বছর পুরোনো ফৌজদারি কার্যবিধিতে আধুনিক পরিবর্তন

Published : ১৭:৫৭, ১৫ আগস্ট ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকার ১২৭ বছর পুরোনো ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ১৮৯৮ সালের আইনের সংশোধনীতে ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থাৎ মোবাইল ফোন কল বা খুদেবার্তা (এসএমএস) ব্যবহার করে সমন জারির বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা রোধে আবশ্যিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান সংযোজিত হয়েছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী গ্রেপ্তার, তদন্ত, জামিন ও বিচারসহ পুরো প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় গ্রেপ্তারকারীর পরিচয় জানাতে হবে, তাদের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং বাসার বাইরে থেকে গ্রেপ্তার হলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্য বা মনোনীত ব্যক্তিকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গ্রেপ্তারের কারণ লিখিতভাবে রেকর্ড করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট থানার জিডিতে তা নথিভুক্ত করতে হবে। অপরাধ প্রমাণ না থাকলে শুধুমাত্র যুক্তিসংগত সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা যাবে।
পুলিশ তদন্ত ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আসামিকে আদালতে হাজির করলে ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ১৫ দিনের জন্য হেফাজতের অনুমতি দিতে পারবেন। হেফাজতের মেয়াদ শেষ হলে দ্রুত হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। তদন্ত চলাকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রমাণ পর্যাপ্ত না হলে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন। তদন্ত শেষের সময়সীমা ৬০ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হয়েছে, যা যৌক্তিক কারণে বাড়ানো সম্ভব।
সংক্ষিপ্ত বিচার বা স্যামারি ট্রায়ালে নতুন বিধান অনুযায়ী আদালত চার্জ গঠন থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ বিচার একই বৈঠকে সম্পন্ন করতে পারবেন। সংক্ষিপ্ত বিচার আদালত যেকোনো স্থানে পরিচালনার সুযোগ থাকছে। আপস প্রক্রিয়া সহজীকৃত হয়েছে, আদালত চুক্তি নথিভুক্তকরণ ও বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা নিতে পারবে।
ফৌজদারি কার্যবিধিতে হাজিরা ও সাক্ষ্যগ্রহণ সংক্রান্ত শিথিলতা আনা হয়েছে। জামিনপ্রাপ্ত আসামি ব্যক্তিগত হাজিরা না দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে পারবেন। নতুন ধারায় আসামি অনুপস্থিত থাকলেও আদালত সাক্ষী জেরা করতে পারবেন।
ধারা ৩২৫-এর সংশোধনের মাধ্যমে গুরুতর জখমের মামলায় জামিন প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ধারা ৩৯৬-এ বেত্রাঘাত শাস্তির বিলোপ এবং সরকারি আদেশে সাক্ষীর নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় খরচের ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়েছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, সংশোধনীগুলো উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভাল হলেও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে সদিচ্ছা থাকলে আইন প্রয়োগে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এই পরিবর্তনগুলো ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং আধুনিক করে তুলবে
BD/AN