কোন দেশে রিজার্ভে সবচেয়ে বেশি সোনা

কোন দেশে রিজার্ভে সবচেয়ে বেশি সোনা ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১২:৩৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে শুধু ডলার বা ইউরো নয়, গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে সোনা।

যুগে যুগে সোনা একটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সাধারণ ধারণা, যে দেশের কাছে যত বেশি সোনার রিজার্ভ থাকে, তার মুদ্রা তত বেশি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী হয়।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, একসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ সম্পূর্ণ সোনানির্ভর ছিল। এমনকি একটি দেশের মুদ্রার মান নির্ধারিত হতো সেই দেশের কাছে থাকা সোনার ভাণ্ডারের পরিমাণের ওপর। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ব্যবহার বাড়তে শুরু করলে, অনেক দেশ তাদের রিজার্ভ সোনা থেকে সরিয়ে অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা ও বন্ডে বিনিয়োগ করে। তবুও আজও প্রতিটি দেশের রিজার্ভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সোনা হিসেবেই সংরক্ষিত থাকে।

সম্প্রতি মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপিমরগ্যান জানিয়েছে, অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ডলারে না রেখে সোনায় রূপান্তর করছে। এই প্রবণতার ফলে বৈশ্বিক বাজারে সোনার চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি দামও ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সাল নাগাদ বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে মোট ৩৬,২০০ টন (৩ কোটি ৬২ লাখ কিলোগ্রাম) সোনার রিজার্ভ ছিল—যা তাদের মোট সম্পদের প্রায় ২০ শতাংশ। ২০২৩ সালে এই হার ছিল ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে সোনার রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

২০২৪ সালে চীন, তুরস্ক, ভারত, ইরাক ও আজারবাইজানসহ বেশ কিছু দেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সোনা কিনেছে। এ দেশগুলোর প্রত্যেকটি এক বছরে প্রায় ২০ টন সোনা রিজার্ভে যুক্ত করেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের দুর্বলতা, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার হ্রাস, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—এসব কারণেই দেশগুলো সোনার দিকে ঝুঁকছে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে। কারণ, মুদ্রা বা বন্ডের মূল্য যেখানে দ্রুত ওঠানামা করে, সেখানে সোনা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।

জেপিমরগ্যানের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অস্থিতিশীল বাণিজ্য নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আরও বেশি সোনা কিনবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরই বিশ্বজুড়ে রিজার্ভে প্রায় ৯০০ টন নতুন সোনা যোগ হতে পারে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনার রিজার্ভ রয়েছে—মোট ৮,১৩৩ টন, যা তাদের বৈদেশিক সম্পদের প্রায় ৭৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির হাতে ১৬,৪০০ টন সোনা থাকবে। এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের ৭০ শতাংশেরও বেশি সোনা দ্বারা গঠিত।

চীন বর্তমানে সোনা কেনার দৌড়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। গত দুই বছরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রিজার্ভের বড় অংশ সোনায় রূপান্তর করেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের হিসাবে, ২০২৪ সালের শেষে চীনের সোনার মজুদ ছিল ২,২৭৯ টন। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই তারা আরও ১৯ টন সোনা কিনেছে, যদিও এই সময় যুক্তরাষ্ট্র কোনো সোনা কেনেনি। ২০২৩ সালে চীন ৮৮ টন সোনা ক্রয় করেছিল। চীনের পাশাপাশি পোল্যান্ড ও তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিয়মিত সোনা কিনছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভেও রয়েছে সোনার উপস্থিতি। বর্তমানে দেশের কাছে ১৪ দশমিক ৮ টন (১৪ হাজার ৮০০ কিলোগ্রাম) সোনা মজুদ রয়েছে, যা মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রায় ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে রয়েছে ৮৮০ টন (৮ লাখ ৮০ হাজার কিলোগ্রাম) সোনা। এর বাজারমূল্য প্রায় ৯,৩০০ কোটি ডলার, যা ভারতের বৈদেশিক রিজার্ভের ১৩ শতাংশ।

পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যায়। স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কাছে ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের প্রায় ৬ দশমিক ৪ টন (৬,৪০০ কিলোগ্রাম) সোনা রয়েছে, যা তাদের বৈদেশিক সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মুদ্রাবাজারের অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সোনা আবারও ফিরে এসেছে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে। ফলে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ভাণ্ডারে সোনার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে, এবং আগামী বছরগুলোতে এই প্রবণতা আরও জোরদার হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement