বৈশ্বিক রপ্তানিতে উঠতে পারে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক রপ্তানিতে উঠতে পারে বাংলাদেশ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১১:২৯, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

চীনা বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং শিল্প সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে—বিশেষত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও উৎপাদন শিল্পে—বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী রপ্তানিমুখী একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশনের (সিইএএবি) সভাপতি হান কুন এক সাক্ষাৎকারে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বড় অবকাঠামো প্রকল্প থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ খাত পর্যন্ত বহু ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু বিদ্যুৎ খাতেই প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াট বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি—প্রায় ৫৪ শতাংশ—চীনা কোম্পানির। ফলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন সক্ষমতা ২৭-২৮ গিগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

হান বলেন, এত বড় অবদান থাকা সত্ত্বেও চীনা কোম্পানিগুলো সাধারণত প্রচারের বাইরে থাকতে পছন্দ করে, ফলে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে চীনা বিনিয়োগ কীভাবে উন্নয়ন ব্যয় কমাতে ও বৃহৎ অবকাঠামোগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ বেশ কিছু জাতীয় প্রকল্পেই তাদের দক্ষতা ব্যবহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশকে এখন শুধু একটি অভ্যন্তরীণ বাজার নয়, বরং রপ্তানিমুখী শিল্পকেন্দ্রে রূপান্তরের উপযুক্ত জায়গা হিসেবে দেখছেন হান। তিনি বলেন, স্বল্প শ্রমব্যয়, উন্নত অবকাঠামো ও আঞ্চলিক বাজারের নিকটবর্তী অবস্থানের কারণে দেশটির ভূ-রাজনৈতিক মূল্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

প্রস্তাবিত চীন–বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (এফটিএ) তিনি এই রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মতে, ট্যারিফ কাঠামো ও নীতি সমন্বয় হলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন চীনের বাইরে বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে পারবে। এতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সরবরাহচেইনে আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত হবে এবং রপ্তানিমুখী খাতগুলো নতুন গতি পাবে।

হান জানান, বিশ্বের মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৩০ শতাংশই চীনের হাতে। এই উৎপাদনের কিছু অংশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত করা গেলে স্বল্পমূল্যের কাঁচামাল ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৈশ্বিক বাজারের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব।

তিনি সতর্ক করে বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে নীতিগত স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। হঠাৎ নীতি পরিবর্তন হলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিতে পড়ে এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত করা প্রকল্প বাতিল হলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এফটিএ কার্যকর হলে চীনা কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিতে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। এতে রপ্তানি খাত—বিশেষত আরএমজি ও উৎপাদন শিল্প—নতুন মাত্রায় পৌঁছাতে পারবে।

বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করতে হলে বেশ কিছু মৌলিক সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন হান। এর মধ্যে রয়েছে কম দামের কাঁচামালে প্রবেশাধিকার, স্থিতিশীল নীতি কাঠামো, নির্ভরযোগ্য অবকাঠামো ও লজিস্টিকস, এবং ব্যবসাবান্ধব শুল্ক–বিনিয়োগ নীতি। তার মতে, এসব নিশ্চিত করতে এফটিএ অপরিহার্য।

তার দাবি, চীনা কোম্পানিগুলো উৎপাদন ইউনিট স্থাপন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যৌথ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে প্রস্তুত—শুধু উপযুক্ত নীতি কাঠামোর প্রয়োজন।

বর্তমানে সিইএএবিতে প্রায় ২৫০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার অর্ধেক অবকাঠামো এবং ৩০ শতাংশ আরএমজি/টেক্সটাইল খাতে কাজ করছে। এরা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও রপ্তানিমুখী সাপ্লাই চেইন গঠনে বড় অবদান রেখেছে।

তিনি জানান, চীনা বিনিয়োগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন খাতে উন্নতি ঘটেছে, যা শিল্পায়নের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।

ভবিষ্যতে নতুন শক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি, লজিস্টিকস ও উৎপাদন খাতসহ আরও বিস্তৃত সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদী হান।

তার মতে, সঠিক নীতি ও কাঠামোগত সহায়তা পেলে বাংলাদেশ এশিয়ার একটি শক্তিশালী রপ্তানি ও শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার উপাদান ইতোমধ্যেই ধারণ করে।

বাংলাদেশ চীন থেকে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও আধা-প্রস্তুত পণ্য আমদানি করে, তবে বাংলাদেশের চীনে রপ্তানি তুলনামূলকভাবে কম। যদিও ডিউটি-ফ্রি ও কোটা-ফ্রি (ডিএফকিউএফ) সুবিধা রয়েছে, পণ্যের সীমিত পরিসর ও রপ্তানিতে বৈচিত্র্যের অভাবে দেশটি এর সুফল পুরোপুরি নিতে পারছে না।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সিইএএবি ২০০৯ সাল থেকে নিবন্ধিত সংস্থা হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে এটি প্রায় ২৫০ সদস্যের একটি প্ল্যাটফর্ম, যার সদস্যরা অবকাঠামো, আরএমজি/টেক্সটাইল, লজিস্টিকস, ট্রেডিং ও এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন খাতে সক্রিয়। ফরচুন গ্লোবাল ৫০০–এর তালিকাভুক্ত প্রায় ২০টি চীনা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে শাখা বা কার্যক্রম রয়েছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement