শহীদ শরীফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ তার এক সন্তানকে আপন বুকে গ্রহণ করেছে।
একজন মা যেমন সন্তানকে ফিরে পায়, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ও তার সন্তানকে ফিরে পেল। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দাফন কার্যক্রম শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য। তিনি জানান, শহীদ হাদির পরিবারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন থেকে তার বৃহৎ পরিবারের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করবে। তার ভাষায়, এই পরিবার আজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এমন কঠিন সময়ে পরিবারটি যে ধৈর্য, সাহস ও সহযোগিতার পরিচয় দিয়েছে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কৃতজ্ঞ।
উপাচার্য আরও বলেন, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের কবরস্থানটি কেবল দাফনের জায়গা নয়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর একটি প্রতীক। এখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি রয়েছে, পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সন্তানও এখানে শায়িত আছেন। এই পবিত্র স্থানে শহীদ হাদিকে দাফনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়েছে।
তিনি জানান, হাদির দাফন বিষয়ে শুক্রবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সিন্ডিকেটের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাকে এই কবরস্থানে দাফন করা হবে। সভায় আবেগঘন পরিবেশে তার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো হয়।
এ সময় উপাচার্য দাফন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে শহীদের যে বিশেষ সম্মানের কথা বলা হয়েছে, আজকের এই আয়োজনের মধ্য দিয়েও সেই মর্যাদার প্রতিফলন আমরা অনুভব করেছি।
এর আগে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির দক্ষিণ পাশে শহীদ শরীফ ওসমান হাদিকে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।
দাফনকালে উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ডাকসু প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ হাদির দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে দাফনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আনা হয়।
শহীদ শরীফ ওসমান হাদির দাফনের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক সাহসী ও প্রতিবাদী কণ্ঠ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেও, তার সংগ্রাম, আদর্শ ও আত্মত্যাগের স্মৃতি দেশের মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘদিন অমলিন হয়ে থাকবে।


































