মাদারীপুরে শেষ নিঃশ্বাস চিত্রনায়িকা বনশ্রীর

মাদারীপুরে শেষ নিঃশ্বাস চিত্রনায়িকা বনশ্রীর ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২০:৩৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রূপালি জগতের ঝলমলে হাতছানি, নায়িকা হয়ে খ্যাতি পাওয়া, মানুষের ভিড়ে তারকা হয়ে ওঠা এসবই ছিল চিত্রনায়িকা বনশ্রীর জীবনের অধ্যায়। নব্বইয়ের দশকে রূপালি পর্দায় অভিষেকের পর দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

একসময় দর্শকের চোখে ছিলেন উজ্জ্বল নায়িকা, খ্যাতির স্বর্গে বিচরণ করেছেন। কিন্তু খ্যাতির আলো ধীরে ধীরে নিভে গেলে জীবন গড়ায় কঠিন বাস্তবতার দিকে। তারকা পরিচয়ের আড়াল থেকে ধীরে ধীরে পড়ে যান অভাব-অনটনের অন্ধকারে।

সেই বনশ্রীই শেষ জীবনে ন্যূনতম মানুষের মতো বেঁচে থাকার সংগ্রামে লড়েছেন। ঢাকায় কখনো ফুল বিক্রি করেছেন, কখনো সাহায্যের আশায় ঘুরেছেন। শেষমেশ আশ্রয় খুঁজে নেন মাদারীপুরের শিবচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ছোট্ট ঘরে। সেই ঘরেই ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে কাটছিল তার জীবনের শেষ দিনগুলো।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জীবনাবসান হলো এই এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকার (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।

পারিবারিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন বনশ্রী। হৃদরোগ, কিডনি ও অন্যান্য জটিলতার কারণে গত পাঁচদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

শিকদারকান্দি গ্রামের মেয়ে বনশ্রীর জন্মও মাদারীপুরেই। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রিনার তিন সন্তানের মধ্যে বনশ্রী ছিলেন সবার বড়। ছোটবেলায় ঢাকায় গিয়েই গড়ে ওঠে তার বড় হওয়ার স্বপ্ন।

১৯৯৪ সালে “সোহরাব-রুস্তম” সিনেমার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় তার যাত্রা। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে তার প্রথম ছবিটি দর্শকের মন জয় করে নেয়। পরে মান্না, আমিন খান, রুবেলসহ জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করে দ্রুতই আলোচনায় আসেন। প্রায় এক ডজন চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

কিন্তু খ্যাতি বেশিদিন টিকেনি। আলো ঝলমলে পৃথিবী থেকে একসময় পড়ে যান অনিশ্চয়তার খাঁদে। অভাবের তাড়নায় রাস্তায় ফুল বিক্রি করেছেন। সরকারের কাছ থেকে একবার ২০ লাখ টাকা অনুদান পেলেও তা দিয়ে স্থায়ী সমাধান হয়নি তার জীবনের।

করোনা কালে শহরের ব্যস্ততা ছেড়ে মাদারীপুরে ফিরে যান বনশ্রী। প্রথমে ভাড়া ঘরে ছিলেন, পরে ঠাঁই মেলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৯ নম্বর ঘরে। সেখানেই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ছিলেন তিনি।

বর্ণিল তারকাখ্যাতি থেকে জীবনের কঠিন বাস্তবতায় পতনের এই গল্প বনশ্রীর জীবনে যেন এক বাস্তব উপাখ্যান হয়ে রইল।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement