বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সালমান শাহের নাম এক অমর কিংবদন্তি হিসেবে চিরস্থায়ী। মাত্র চার বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে তিনি ২৭টি সুপারহিট সিনেমার মাধ্যমে কোটি দর্শকের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছেন। তবে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার আকস্মিক মৃত্যু আজও রহস্যের মেঘে ঘেরা।
ভক্তদের মধ্যে এখনো সমান তালে আছে বিশ্বাস, যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আবার একাধিক তদন্তে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রয়াত নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক তার মানসিক অবস্থা নিয়ে নতুন দাবি উত্থাপন করেছেন। সামিরা জানিয়েছেন, সালমান শাহ ছিলেন ‘সুইসাইডাল বাই নেচার’, অর্থাৎ মানসিকভাবে আত্মহত্যার প্রবণ। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইমন (সালমান শাহ) আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী দু’বার, আরেকটি অন্য হাসপাতালে, সবই তার বিয়ের আগে ঘটেছে। একবার মা-সন্তান ঝগড়ার পর, একবার সামিরাকে বিয়ে করতে রাজি করানোর জন্য, আরেকবার অন্য এক ঘটনায়।
সামিরা আরও ব্যাখ্যা করেন, কেন সালমান এমন মানসিক অবস্থায় ছিলেন। ইমন মূলত সিনেমায় ক্যারিয়ার গড়তে চায়নি, তিনি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলেন। তার মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্কও ভালো ছিল না। এমনকি তিনি কখনো তাকে ‘মা’ বলে ডাকতেন না, বরং ‘মহিলা’ বলে সম্বোধন করতেন। একবার শুটিং সেটে ডলি জহুর আন্টি তাকে এ নিয়ে বকেছেন।
অন্যদিকে, সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বরাবরই দাবি করে আসছেন যে তার ছেলে আত্মহত্যা করেননি, বরং তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন, সালমান শাহ খুন হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি সম্ভাব্য কারণও উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থানা-পুলিশ, সিআইডি, র্যাব ও পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত চালিয়েছে। প্রতিটি প্রতিবেদনে মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও সালমানের পরিবার তা মানতে নারাজ।
নব্বইয়ের দশকে রোমান্টিক হিরো হিসেবে সালমান শাহর উত্থান নতুন যুগের সূচনা করেছে। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’—প্রতিটি সিনেমাই বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছে।
আজও সালমান শাহর মৃত্যু রহস্যময়। তবে সাবেক স্ত্রী সামিরার সাম্প্রতিক বক্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ফ্যান ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
