চার্চ অব ইংল্যান্ড পেল প্রথম নারী আর্চবিশপ

চার্চ অব ইংল্যান্ড পেল প্রথম নারী আর্চবিশপ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২০:৩২, ৩ অক্টোবর ২০২৫

চার্চ অব ইংল্যান্ড তাদের দীর্ঘ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী আর্চবিশপ পেল। ক্যান্টারবারির নতুন আর্চবিশপ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সারাহ মুলালি।

চার্চটির প্রায় এক হাজার চারশ বছরের ঐতিহ্যে এবারই প্রথম কোনো নারী এই পদে বসলেন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মুলালি কেবল চার্চ অব ইংল্যান্ডেরই প্রথম নারীপ্রধান নন, বরং তিনি বিশ্বব্যাপী অ্যাংলিকান সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে বসতে যাচ্ছেন। চার্চটির শেকড় প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের সময়কাল পর্যন্ত প্রসারিত। চলতি বছরের শুরুতে নির্যাতন কেলেঙ্কারির দায়ে জাস্টিন ওয়েলবির পদত্যাগের পর তার উত্তরসূরি বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা কমিটি মুলালির নাম প্রস্তাব করে। এরপর রাজা তৃতীয় চার্লস সেই মনোনয়ন অনুমোদন দেন বলে যুক্তরাজ্য সরকার নিশ্চিত করেছে।

৬৩ বছর বয়সী মুলালি হচ্ছেন চার্চটির ১০৬তম আর্চবিশপ অব ক্যানটারবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, চার্চটির প্রথম আর্চবিশপ নিযুক্ত হয়েছিলেন খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের শেষ দিকে।

পেশাগত জীবনের শুরুতে নার্স হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা মুলালি এক বিবৃতিতে বলেন, এই নতুন ভূমিকা তার জন্য একটি ‘বৃহৎ দায়িত্ব’। তবে তিনি শান্ত মন নিয়ে ও ঈশ্বরের ওপর আস্থা রেখে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও মুলালির নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চার্চ অব ইংল্যান্ড দেশের জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। এর গির্জা, ক্যাথেড্রাল, স্কুল ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন আর্চবিশপ জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।

এর আগে ওয়েলবি একটি নির্যাতন কেলেঙ্কারির জেরে পদত্যাগ করেন। তদন্তে উঠে আসে, চার্চ অব ইংল্যান্ড ১৯৭০-এর দশকের বেশ কিছু নির্যাতনের ঘটনা গোপন রেখেছিল। ২০১৩ সালে বিষয়টি জানার পরও ওয়েলবি কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

স্বতন্ত্র তদন্তে জানা যায়, আইনজীবী জন স্মাইথ ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে ইভানজেলিকাল সামার ক্যাম্প আয়োজন করতেন এবং সেখানে প্রায় ১৩০ জন কিশোর ও তরুণকে নির্যাতন করেছিলেন। স্মাইথ ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় মারা যান, তখন তিনি ব্রিটিশ পুলিশের তদন্তাধীন ছিলেন। তবে কখনোই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়নি।

এই কেলেঙ্কারি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডের ভেতরে সংস্কারের দাবিকে আরও জোরালো করে। যদিও চার্চটির সর্বোচ্চ প্রধান ব্রিটিশ সম্রাট, বাস্তবে এর আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব আর্চবিশপ অব ক্যানটারবির হাতে থাকে।

বর্তমানে চার্চ অব ইংল্যান্ডের সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই কোটি হলেও ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী নিয়মিত গির্জায় যাতায়াতকারীর সংখ্যা এক মিলিয়নেরও কম।

দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর অবশেষে রাজা তৃতীয় চার্লস মুলালিকে নিয়োগ দেন। এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন এমনকি ব্রিটিশ গোপন নিরাপত্তা সংস্থা এমআই৫-এর সাবেক প্রধানও।

অ্যাংলিকান চার্চের ইতিহাস শুরু হয় ১৫৩০-এর দশকে, রাজা অষ্টম হেনরি যখন রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাষ্ট্রীয় চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন।

উল্লেখ্য, মুলালি একসময় যুক্তরাজ্যের প্রধান নার্সিং কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তিনি সবসময় চার্চগুলোতে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ সংস্কৃতি গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করে এসেছেন, যেখানে ভিন্নমত ও মতবিরোধকেও স্থান দেওয়া হবে।

শুক্রবার রাজা চার্লসের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় চার্চ অব ইংল্যান্ডের নতুন প্রধান হিসেবে মুলালির নাম ঘোষণা করে। চার্চ অব ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গভর্নর হিসেবে চার্লস নিজেই এই নিয়োগ নিশ্চিত করেন—একটি পদ যা ষোড়শ শতকে রাজা অষ্টম হেনরি সৃষ্টি করেছিলেন।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement