রংপুরে পশু জবাইয়ে নিয়ম না মানায় হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

Published : ২১:৩৫, ৩ অক্টোবর ২০২৫
অধিকাংশ হাট বাজারে কসাইখানা ছাড়াই করা হচ্ছে গরু খাসি জবাই। রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি পশু জবাই করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না কোন কোন স্থানে পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছিল ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব অবস্থা দেখে মনে হয় যে যা করছে সেটাই যেন নিয়ম। একটি নির্ভযোগ্য সুত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগে ১ হাজার ৩০৩টি হাট-বাজার রয়েছে, তবে কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা বা ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি।
দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সরাসরি মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা একসঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। পশুর রোগ ছড়াচ্ছে মানবদেহে।
প্রচলিত আইনে মাংস ব্যবসা শুরু করার আগে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নিতে হয়। এরপর প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাংস বিক্রির লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু রংপুর বিভাগের অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ীরই এ ধরনের সনদ নেই।
অনেকেই নিয়মটির ব্যাপারে জানেনই না। রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় গরু থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স রোগ ধরা পড়ে। অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ নিয়ে দুজন মারাও যান। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে আক্রান্ত হন একজন। অন্যজন অসুস্থ গুরুর মাংস রান্না করতে গিয়ে আক্রান্ত হন। এছাড়া আরও অনেককেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে পাশের গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়ও। কিন্তু সেখানেও মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেই। করা হয় না নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি স্পটে দৈনিক গরু-ছাগল জবাই করা হয় ৬০ থেকে ৬৫টি।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় মাংস ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬০ জনেরও বেশি। কিন্তু কারও লাইসেন্স নেই। এমনকি এ উপজেলায় জবাইয়ের আগে পশুর স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করা হয় না। তারাগঞ্জের এক মাংস ব্যবসায়ী বলেন, মাংস ব্যবসার জন্য প্রাণিসম্পদ থাকি লাইসেন্স নিবার নাগে এটা জানতাম না। কয়েক দিন আগে মিটিংয়ে শুনেছি। এখন নিব।
আমরা অসুস্থ পশু জবাই করি না। ওই জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি না। শেড দখলে তাই গরু বাইরে জবাই করা হয়। তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতে খারুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় কোনো মাংস ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই।
তাঁরা শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করেন। অনেকের তাও নেই। আমরা সভা করে সব মাংস ব্যবসায়ীকে লাইসেন্স ও পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বলেছি। তাঁরা আবেদন করলে আমরা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স প্রদান করব। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
বৈধভাবে মাংস ব্যবসা না করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সুন্দরগঞ্জ পৌর বাজার ইজারাদার ও মাংস ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী বলেন, পৌরসভায় নিয়মিত পরীক্ষা হয়। এটা সব জায়গায় করা উচিত। বিশেষ করে বামনডাঙ্গা, রামগঞ্জ ও বেলকায়।
এর মধ্যে রামগঞ্জ বাজারে বেশি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। আর এসব মাংস তারা সব জায়গায় পাইকারি বিক্রি করে দেয়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা এবং রামগঞ্জ বাজারের কসাইখানায় ফুললি সাপোর্ট দিচ্ছি আমরা।
সেখানে পরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই গরু-ছাগল জবাই করতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া বাকি কসাইখানাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আব্দুর হাই সরকার বলেন, প্রাণিসম্পদ থেকে মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করছি।
আমরা নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাই, কিন্তু চরম জনবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হয় না। প্রতিটি হাটে চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে হাট-বাজারগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করেছিল। নতুন করে আরও দু’জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ১১জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো।
বিডি/এএন