সুন্দরগঞ্জে গরু জবাইয়ের পর ১১ জনে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

Published : ২১:০৫, ৩ অক্টোবর ২০২৫
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে মাংস কাটাকাটি করায় একই গ্রামের অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে, আর বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে। খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
কিশামত সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাফিজার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত সোমবার স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুর রহমানের একটি রোগাক্রান্ত গরু জবাই করা হয়। গ্রামের কয়েকজন মিলে গরুটির মাংস কাটাকাটি করেন। পরে দেখা যায়, ওই কাজে অংশ নেওয়া অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, জবাইয়ের চারদিন পর আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়ে এবং ক্ষতস্থানে পচন ধরে। বিশেষত হাত, নাক, মুখ ও চোখে উপসর্গগুলো স্পষ্ট হয়।
আক্রান্তদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তারা গাইবান্ধার রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এর আগেও পাশের পীরগাছা উপজেলায় গরু-ছাগলের মাঝে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন সেই প্রভাব সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে তিস্তা ও ঘাঘট নদীবেষ্টিত বেলকা, বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর ও পৌরসভা এলাকায় এর প্রকোপ বেশি দেখা দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদান করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত গরু-ছাগল কোনোভাবেই জবাই করা যাবে না, কারণ আক্রান্ত পশু পরিচর্যার মাধ্যমেই মানুষের শরীরে এ রোগ ছড়াতে পারে।
আক্রান্ত গৃহস্থ মাহবুর রহমান জানান, প্রায় ১০ দিন আগে তার আরেকটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হলেও অবস্থার অবনতি হয় এবং শেষ পর্যন্ত সোমবার সেটি জবাই করা হয়। ওই জবাইয়ের কাজে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, সবাই অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন।
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “উপজেলার কয়েকটি এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। পৌরসভায় ইতোমধ্যেই দুটি গরু মারা গেছে। সাহাবাজ এলাকায় টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। আমাদের কাছে বর্তমানে ১৩ হাজার টিকা রয়েছে, আরও সরবরাহের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে মানুষ আক্রান্ত হয় না, তবে গরু বা ছাগলের পরিচর্যার সময় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, বেলকা ইউনিয়ন থেকে অন্তত ৪–৫ জন অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গাইবান্ধা ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
বিডি/এএন