কানপুরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ সাইনবোর্ডে উত্তেজনা

Published : ২০:৪৬, ২১ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের উত্তর প্রদেশের শিল্পনগরী কানপুরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা একটি সাইনবোর্ড টাঙানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন, বাড়িঘর উচ্ছেদ এবং বিভিন্ন মামলার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা বিশেষ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের শাসনকালের প্রেক্ষাপটে নজর কেড়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি ভারতে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নতুন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কানপুরের সাঈদ নগরে, যখন ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন উপলক্ষে একটি আলোকসজ্জা করা সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। সাইনবোর্ডে লাল রঙের হার্ট চিহ্নের সঙ্গে লেখা ছিল, ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’। তবে স্থানীয় হিন্দু গোষ্ঠী শ্রী রামনবমী সমিতি-র সঙ্গে যুক্ত মোহিত বাজপায়ী অভিযোগ তুলেন যে সাইনবোর্ডটি এমন এক স্থানে রাখা হয়েছে, যা হিন্দুদের একটি উৎসবের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মৌলিকভাবে, সাঈদ নগরের মুসলিমরা দাবি করেছেন, প্রতিবছর ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপনের জন্য তারা একই উন্মুক্ত স্থানে জড়ো হন এবং সরকারি অনুমতিসহ সাজসজ্জা করেন। এর ফলে ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং নয়জন মুসলিম পুরুষ ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনাটি প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরে উত্তর প্রদেশের বেরেলিতেও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর রাজ্য পুলিশ একজন ধর্মীয় নেতাসহ নয়জন মুসলিমের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। প্রতিবাদে মাওলানা তৌকির রেজা খান সমাবেশের ডাক দেন।
২৫ সেপ্টেম্বর সমাবেশের অনুমতি না মেলায়, আইএমসি-এর বিবৃতি সত্ত্বেও হাজার হাজার মুসলিম মাজারের আশপাশে জড়ো হন এবং তাদের হাতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা পোস্টার থাকে। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ অনুযায়ী, অনুমতিবিহীন এই সমাবেশে পুলিশকে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ তখন লাঠিপেটা চালায় এবং তৌকির রেজা খানসহ কয়েক ডজন মুসলিমকে গ্রেফতার করে।
ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এটিকে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার সুপরিকল্পিত চেষ্টা বলে আখ্যা দেন। এরপর মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়ে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, উত্তর প্রদেশসহ অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যে মুসলিমদের বাড়ি ও ব্যবসায়িক স্থাপনা উচ্ছেদ (‘বুলডোজার জাস্টিস’) সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অ্যাপিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন স্থানে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ সংক্রান্ত প্রচারণার কারণে অন্তত ২২টি এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং আড়াই হাজারের বেশি মানুষের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ নবী (সা.)–এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশকে উসকানিমূলক হিসেবে বর্ণনা করে মুসলিমদের ধর্মীয় ও মৌলিক অধিকার দমনের চেষ্টা করছে।
সারসংক্ষেপে, কানপুরের এই ঘটনাটি কেবল একটি স্থানীয় সাম্প্রদায়িক বিতর্ক নয়, বরং এটি ভারতের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
বিডি/এএন