শিশুর বদনজর রোধে ইসলামিক নির্দেশনা

শিশুর বদনজর রোধে ইসলামিক নির্দেশনা ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০১:৩৯, ২২ অক্টোবর ২০২৫

মানুষের জীবনে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান ও আবেগঘন উপহার হলো সন্তান। সন্তান কেবল শরীরের অংশ নয়, বরং মনের প্রশান্তি, হৃদয়ের টুকরো এবং আত্মার প্রতিফলন।

সন্তানের আগমন যেমন আনন্দের বার্তা বয়ে আনে, তেমনি এটি মা-বাবার জন্য এক বিশাল দায়িত্ব এবং পবিত্র আমানত।

আল্লাহ তায়ালা স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মায়ের অন্তরে সন্তানের প্রতি গভীর মমতা, ভালোবাসা ও করুণা স্থাপন করেছেন। এই ভালোবাসা কোনো জাগতিক স্বার্থের কারণে নয়—এটি সম্পূর্ণ আত্মিক ও আধ্যাত্মিক এক সম্পর্ক।

প্রতিটি বাবা-মা চায়, তাদের সন্তান যেন সব ধরনের অনিষ্ট ও বিপদ থেকে নিরাপদ থাকে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও সন্তানের নিরাপত্তা ও কল্যাণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী সমাজে বহু যুগ ধরে বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে যে, ‘বদনজর’ বা ঈর্ষাপূর্ণ দৃষ্টি শিশুর ক্ষতি করতে পারে।

এই বিশ্বাস থেকেই অনেক পরিবার কিছু ইসলামি রীতিনীতি অনুসরণ করে, যেমন—শিশুর কপালে হালকা কালো টিপ দেওয়া বা দুল পরানো। মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুকে দুষ্ট দৃষ্টি থেকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে, এমন কোনো কাজ কেবল আল্লাহর নামে ও দোয়া সহকারে করতে হবে, যেন সেটি আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার প্রতীক হয়, অন্ধবিশ্বাস নয়।

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা।” — (সূরা কাহফ: ৪৬)

এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সন্তান আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত—যার সঠিক লালন-পালন ও সুপথে পরিচালনা করা প্রতিটি পিতামাতার দায়িত্ব। নবী করিম ﷺ হাদিসে বারবার সন্তানদের প্রতি দয়া, শিক্ষাদান ও উত্তম চরিত্রে গড়ে তোলার উপদেশ দিয়েছেন।

তবে প্রশ্ন আসে—বদনজর থেকে রক্ষায় কালো টিপ দেওয়া ইসলামে কতটা বৈধ?

আলেমদের মতে, শিশুর সৌন্দর্য কমানোর উদ্দেশ্যে বা দুষ্ট দৃষ্টি এড়াতে হালকা কালো দাগ দেওয়া নাজায়েজ নয়। একবার হজরত ওসমান (রা.) একটি সুন্দর শিশুকে দেখে বলেছিলেন,

“তার চিবুকে একটি কালো দাগ দাও, যাতে বদনজর না লাগে।”
(শরহুস সুন্নাহ লিলবাগাবী, ১২/১৬৬)

তবে কেউ যদি বিশ্বাস করে যে কালো টিপের অলৌকিক শক্তি আছে, তা হলে সেটি কুসংস্কার এবং শরিয়তবিরোধী। ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে, কোনো বস্তুতে স্বতঃসিদ্ধ ক্ষমতা নেই—ক্ষমতা কেবল আল্লাহর।

প্রখ্যাত ইসলামি বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন,

“মানুষ কখনো রাক্ষুসে দৃষ্টিতে তাকালে সূক্ষ্ম ক্ষতি হতে পারে, যা আমরা বুঝতে পারি না। তবে এসব থেকে রক্ষার জন্য কালো টিপ নয়, বরং দোয়া ও আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়াই উত্তম।”

তিনি আরও বলেন,

“শিশুর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য টিপ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু বদনজর থেকে রক্ষা পাবে এই বিশ্বাসে টিপ দেওয়া সম্পূর্ণ কুসংস্কার।”

 শিশুকে বদনজর থেকে রক্ষার ইসলামি উপায়

১. সকাল ও সন্ধ্যায় সাতবার করে এই দোয়া পাঠ করুন:

أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة ومن كل عين لامة
উচ্চারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁ ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাত দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। (বুখারি: ৩৩৭১)

২. প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে সন্তানের শরীরে বুলিয়ে দিন।

৩. তিনবার করে পাঠ করুন:

بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الأرض ولا في السماء وهو السميع العليم
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরযি ওয়ালা ফিসসামা-ই ওয়াহুয়াস সামীউল আলীম।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামের সঙ্গে পৃথিবী বা আকাশের কোনো কিছু ক্ষতি করতে পারে না। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (আবু দাউদ ও তিরমিজি)

৪. কোনো কিছু দেখে ভালো লাগলে বলুন:

সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ।
এভাবে বললে আপনার দৃষ্টির কোনো নেতিবাচক প্রভাব অন্যের ওপর পড়বে না।

৫. কেউ যদি বদনজরে আক্রান্ত হয়, তখন নবীজির শেখানো দোয়াটি পড়ে ফুঁ দিন:

بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ওয়া হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।
অর্থ: আল্লাহর নামে তোমাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেন প্রতিটি অনিষ্ট, বদনজর ও হিংসুকের দৃষ্টি থেকে আল্লাহ তোমাকে শিফা দেন। (মুসলিম: ৫৫১২)

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement