যেভাবে আসল খেজুরের গুড় চিনবেন

যেভাবে আসল খেজুরের গুড় চিনবেন ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০৩:২৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

শীত মৌসুম এলেই বাঙালির ঘরে ঘরে খেজুরের গুড়কে ঘিরে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। রুটির সঙ্গে গুড়, গরম দুধে গুড় কিংবা নানান রকম পিঠায় গুড়ের ব্যবহার অনেকের কাছেই শীতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বর্তমানে বাজারে যেসব গুড় বিক্রি হচ্ছে তার বড় একটি অংশই ভেজাল।

এসব গুড় মূলত চিনি, কেমিক্যাল ও কৃত্রিম রং মিশিয়ে তৈরি করা হয়, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। অথচ খাঁটি খেজুরের গুড়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকার পুরোনো গুড় ব্যবসায়ী মোমিনুর রহমান মন্টু জানান, ভেজাল গুড় খেলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, অন্যদিকে শরীর কোনো উপকারই পায় না। তাঁর মতে, আসল খেজুরের গুড়ে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামসহ নানা ধরনের খনিজ ও পুষ্টি উপাদান, যা রক্তস্বল্পতা কমাতে ও শরীরকে শক্তিশালী রাখতে সহায়ক।

ঘরে বসেই কীভাবে খাঁটি গুড় চেনা যাবে—সে বিষয়ে রয়েছে কিছু সহজ উপায়।

প্রথমত, পানি দিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। একটি স্বচ্ছ গ্লাস পানিতে গুড়ের ছোট একটি টুকরা ফেলুন। খাঁটি গুড় ধীরে ধীরে গলে গিয়ে পানির রং হালকা লালচে বা বাদামি করে তুলবে। কিন্তু ভেজাল গুড় দিলে পানিতে সাদা স্তর ভাসতে দেখা যাবে অথবা পুরো পানি দুধের মতো ঘোলাটে হয়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত, ভিনেগার ব্যবহার করে পরীক্ষা করা যায়। এক চামচ গুড়ের গুঁড়ার মধ্যে চার-পাঁচ ফোঁটা ভিনেগার দিলে যদি ফেনা বা বুদবুদ ওঠে, তাহলে বুঝতে হবে গুড়টি ভেজাল। কারণ এতে সাধারণত চিনি ও বেকিং সোডা মেশানো থাকে। খাঁটি গুড়ে ভিনেগার দিলে কোনো ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া দেখা যায় না।

তৃতীয়ত, গুড়ের রং, গঠন ও গন্ধ খেয়াল করা জরুরি। আসল খেজুরের গুড় সাধারণত গাঢ় কালচে-বাদামি রঙের হয়, হাতে নিলে চটচটে অনুভূত হয় এবং ভাঙলে খসখসে শব্দ করে। এর গন্ধে হালকা ধোঁয়া বা মাটির মতো প্রাকৃতিক সুবাস পাওয়া যায়। বিপরীতে ভেজাল গুড় অনেক সময় সাদাটে, হলদেটে বা অতিরিক্ত চকচকে হয়, হাতে তেমন চটচটে লাগে না এবং এতে হয় কোনো গন্ধ থাকে না, নয়তো কেমিক্যালের মতো অস্বাভাবিক গন্ধ পাওয়া যায়।

চতুর্থত, স্বাদের দিক থেকেও পার্থক্য বোঝা যায়। খাঁটি গুড়ের মিষ্টির সঙ্গে হালকা ঝাঁঝ বা সামান্য তিতকুটে স্বাদ থাকে, যা খেজুরের রসের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। ভেজাল গুড়ে কেবল চিনির মিষ্টি অনুভূত হয়, কোনো ঝাঁঝ থাকে না। আবার যদি গুড়ে নোনতা স্বাদ পাওয়া যায়, তাহলে তা না খাওয়াই ভালো।

পঞ্চমত, চাপ দিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। দুই আঙুল দিয়ে গুড় চেপে দেখলে আসল গুড় নরম ও চটচটে অনুভূত হবে। ভেজাল গুড় সাধারণত শক্ত হয় এবং চাপ দিলে সহজেই গুঁড়া হয়ে যায়।

গুড় কেনার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যদি গুড়ের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম হয়, তাহলে সেটি নিয়ে সন্দেহ করা উচিত। গ্রামাঞ্চল থেকে আনা খাঁটি খেজুরের গুড়ে অনেক সময় ছোট ছোট কালো দাগ বা রসের ছিবড়ে দেখা যায়, যা আসল গুড়ের একটি স্বাভাবিক লক্ষণ। বাজারে প্যাকেটজাত গুড়ের লেবেলে ‘খাঁটি খেজুর গুড়’ লেখা থাকলেও, নিজে পরীক্ষা না করলে আসল ও ভেজালের পার্থক্য বোঝা কঠিন। তাই ভেজাল গুড় থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করতে হলে ক্রেতাদের সচেতন হওয়া জরুরি। সঠিকভাবে গুড় বেছে নিয়ে ব্যবহার করলে সুস্বাস্থ্যের পথে এক ধাপ এগিয়ে থাকা সম্ভব—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। 

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement