ইতালি থেকে ১০টি মাল্টি‑রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট কেনা হচ্ছে

ইতালি থেকে ১০টি মাল্টি‑রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট কেনা হচ্ছে ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২০:১০, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিমানবাহিনী আধুনিকীকরণে নতুন ধাক্কা দিতে যাচ্ছে — ইতালি ও তুরস্ক থেকে অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট কেনার প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এতে ইতালি থেকে ইউরোফাইটার টাইফুন (Eurofighter Typhoon) ও তুরস্ক থেকে টি‑১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার আনার কথা বলা হচ্ছে। একই লাইন ধরে পাকিস্তানী জেএফ‑১৭ এবং চীনের জে‑১০সি কেনা সংক্রান্ত পূর্ব আলোচনাও চলছে — ফলে সামগ্রিকভাবে বেশ কয়েকটি ভিন্ন উত্পাদক থেকে সমন্বিত বহর গঠনের লক্ষ্যমাত্রা স্পষ্ট হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ইতালি থেকে ১০টি ইউরোফাইটার টাইফুন এবং তুরস্ক থেকে ছয়টি টি‑১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেনাকাটার প্রক্রিয়া সরকার-টু-গভর্নমেন্ট (G2G) ভিত্তিতে চলবে এবং চুক্তি চূড়ান্ত করতে ইতালি ও তুরস্কের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করা হবে — লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করা।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের তত্ত্বাবধানে গঠন করা হবে ১২ সদস্যের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি, যার সভাপতি থাকবেন একজন এয়ার ভাইস মার্শাল। কমিটিতে থাকবে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বিমান সদরের বিশেষজ্ঞরা। তাদের কাজ হবে— খসড়া চুক্তি পর্যালোচনা, দর‑কষাকষি, চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ, অর্থপরিশোধ পদ্ধতি, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ শর্তাবলি নির্ধারণ ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলা হয়েছে।

সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত বিবেচনা — পশ্চিমে পাক‑ভারত সীমান্তে উত্তেজনা, উত্তর-পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুরে উত্তেজনা, পাশাপাশি মায়ানমারের সংকট বিবেচনায় সামরিক সক্ষমতা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ে বিমানবোহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলগত অগ্রাধিকার।

ইউরোফাইটার টাইফুনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে — এটি একটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টি‑রোল কমব্যাট বিমানে, আকাশে আধিপত্য স্থাপন, স্থল লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত, বৈদ্যুতিক যুদ্ধ ও রাডার এড়ানে সক্ষম। একটি টাইফুন রিফুয়েলিং ছাড়া প্রায় ২,৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত একটানা উড়তে পারে এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ২,৪৯৫ কিমি গতিবেগ অর্জন করতে সক্ষম। ডেল্টা‑ডানা ও কানার্ড নকশা এটিকে উচ্চ গতিশীলতা দেয়; একসাথে স্টেলথ, উন্নত রাডার ও সেন্সর, বহুমুখী অস্ত্র বহনের সামর্থ্য থাকে। এই কারণে অঞ্চলীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টাইফুনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এটি নতুন কোনো উদ্যোগ নয় — ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার চীনের জে‑১০সি (প্রায় ২০টি) ও পাকিস্তানের জেএফ‑১৭ (১৬টি) সংক্রান্ত প্রস্তাব পরিবেশন ও আলোচনা করেছে; জে‑১০সি কেনার জন্য প্রাথমিকভাবে আনুমানিক ২২০ কোটি ডলার ও জেএফ‑১৭ এর জন্য প্রায় ৭২০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ধরা হয়েছিল। এখন ইউরোফাইটার ও টি‑১২৯ সংযোজন এই পরিকল্পনাকে বহুমাত্রিক করেছে।

সরকারি কর্মীদের মতে, ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেট‑আপ, প্রশিক্ষণ, মেইনটেন্যান্স ও খুচরা যন্ত্রাংশসহ সার্বিক স্থায়ী সক্ষমতা গড়ে তোলা হবে—চুক্তিতে এসব শর্ত স্পষ্ট থাকবে। তবেবাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি অর্থায়ন, সময়সূচি ও প্রশিক্ষণ ইস্যু চূড়ান্ত করতে এখনই অনেক ধাপ রয়েছে; তাই ২০২৫‑২৬ অর্থবছরই চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

অবশেষে, সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে—বর্তমান অশান্তিপূর্ণ আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণ একটি অবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা উদ্যোগ; তবে এর সঙ্গে যুক্ত ব্যয়, শিক্ষা‑প্রশিক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণের দায়ও সমানভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement