ইতালির সেই গ্রাম, বাড়ি কিনলেই মিলবে ২৮ লাখ টাকা

Published : ২২:৫৮, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু এমনই বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালির টুসকানি অঞ্চলের মনোরম পাহাড়ঘেরা ছোট্ট গ্রাম রাদিকনদোলি। একসময় প্রাণচঞ্চল ও ঐতিহ্যবাহী এই মধ্যযুগীয় বসতিটি এখন প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
যেখানে এক সময় প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করতেন, সেখানে বর্তমানে সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৯৬৬ জনে। গ্রামের ৪৫০টি বাড়ির মধ্যে শতাধিক এখন খালি পড়ে আছে, নিস্তব্ধ হয়ে আছে পথঘাট ও প্রাঙ্গণ।
এই অবস্থা বদলাতে স্থানীয় প্রশাসন নিয়েছে এক অভিনব ও সাহসী উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে মিলছে নগদ অর্থসহ নানা সুবিধা — সর্বোচ্চ ২৩ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২৮ লাখ টাকা) পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে প্রশাসন।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো, হারানো জনজীবন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনা। চলতি বছর উদ্যোগটি আরও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এখন শুধু বাড়ি কিনলেই নয়, যারা ভাড়া নিয়ে থাকতে চান, তাদের জন্যও রয়েছে বড় সুযোগ—প্রথম দুই বছরের ভাড়ার ৫০ শতাংশ সরকার বহন করবে।
রাদিকনদোলির মেয়র ফ্রানচেসকো গুয়ারগুয়ালিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রোগ্রামের আওতায় যারা বাড়ি কিনবেন, তারা ২০ হাজার ইউরো পর্যন্ত অনুদান পাবেন, সঙ্গে পরিবহন, সংস্কার ও অন্যান্য খরচের জন্য অতিরিক্ত ৬ হাজার ইউরো পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, যেখানে স্থানীয়ভাবে গড় ভাড়া ছিল মাসে প্রায় ৪০০ ইউরো, সেখানে সরকারি ভর্তুকির কারণে সেটি কমে দাঁড়াবে মাত্র ২০ থেকে ২০০ ইউরোর মধ্যে।
তবে এ সুবিধা পেতে কিছু শর্তও মানতে হবে। বাড়ি কিনে যারা বসবাস শুরু করবেন, তাদের কমপক্ষে ১০ বছর রাদিকনদোলিতে থাকতে হবে, আর যারা ভাড়ায় থাকবেন, তাদের থাকতে হবে অন্তত ৪ বছর।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, গ্রামের বাড়িগুলোর দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ইউরোর মধ্যে। অধিকাংশ বাড়িই তুলনামূলক ভালো অবস্থায় রয়েছে, কিছু বাড়িতে শুধু অল্প সংস্কারের প্রয়োজন। মেয়র গুয়ারগুয়ালিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু বাড়ি বিক্রি নয়—আমরা চাই, রাদিকনদোলি আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা আসলে মানুষকে নতুন জীবন শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, ইতালির জনসংখ্যা দীর্ঘদিন ধরেই দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এর আগে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল জনসংখ্যা বাড়াতে ‘এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রি’-এর মতো উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাদিকনদোলির এই নতুন প্রকল্পটি সেই তুলনায় অনেক বেশি বাস্তবসম্মত, টেকসই ও কার্যকর।
বর্তমানে টুসকানির এই পাহাড়ঘেরা শান্ত গ্রামটি ইউরোপজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কারণ, এখানে শুধু একটি বাড়ি নয়—একটি নতুন জীবন, নতুন সুযোগ আর প্রকৃতির মাঝে স্থায়ী আশ্রয়ের নিশ্চয়তা মিলছে।
বিডি/এএন