শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে সামান্তা শারমিনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে সামান্তা শারমিনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৯:০৮, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এই ফাঁসির রায় দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্যদের জন্য ন্যায়বিচারের এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হবে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান মানুষের দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এক গণজাগরণ ছিল, আর আজকের রায় সেই সংগ্রামের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি ঐতিহাসিক ধাপ। জনগণ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ এবং ’২৪-এর অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত বর্বর দমন-পীড়ন আদালতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে। এই রায় ন্যায়সঙ্গত ও আনুপাতিক—এমন দাবি করে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে রায় কার্যকর করতে রাষ্ট্রের উচিত সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। পাশাপাশি ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের আদালতে দোষী সাব্যস্ত একজন ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়ে কোনো দেশই কলঙ্কমুক্ত থাকতে পারে না।

এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আজকের রায় ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রজন্মের জন্য স্পষ্ট বার্তা দেয়—ক্ষমতার অহংকার কখনোই স্থায়ী নয়। যারা স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করতে চায়, তারা যতই শক্তিশালী ভাবুক না কেন, ন্যায়বিচারের কাঠগড়ায় তাদের দাঁড়াতেই হয়। এই রায় রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।

এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একই রায়ে দায় স্বীকার করায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি প্রমাণিত হয়েছে—যার দুটি অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং একটি অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামালও একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হয়েছেন। রাজসাক্ষী হওয়ায় মামুনকে তুলনামূলক কম শাস্তি দিয়েছে আদালত।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে আইনজীবীদের পাশাপাশি জুলাই–আগস্টের ঘটনার নিহতদের কয়েকজন পরিবারের সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়েছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এরপর ১৭ অক্টোবর বিচারকাজ শুরু হলে সেদিনই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

মামলায় অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অপরাধে উসকানি, হত্যাকাণ্ড পরিচালনা, মারণাস্ত্র ব্যবহার, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ আনা হয়। ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণ জুলাই–আগস্টের ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ আদালতে তুলে ধরেন।

প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, রায়কে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বিভিন্ন প্রবেশমুখে চেকপোস্ট স্থাপন, পুলিশ–র‌্যাব–বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ মোতায়েনসহ গোটা রাজধানীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বা অগ্নিসংযোগ করলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে গুলি চালানোরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement