২৫ হাজার শ্রমিকের চাকরি বাঁচল, এক সিদ্ধান্তে

২৫ হাজার শ্রমিকের চাকরি বাঁচল, এক সিদ্ধান্তে ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২০:২৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

বেক্সিমকো টেক্সটাইল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে চালু হতে যাচ্ছে জাপান–বাংলাদেশি যৌথ উদ্যোগে, যা দেশের শিল্পখাতে বড় পুনর্গঠন হিসেবে ধরা হচ্ছে।

রিভাইভাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেডের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে। সম্প্রতি, ৮ অক্টোবর জনতা ব্যাংক, বেক্সিমকো ও রিভাইভালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় লিজ চুক্তির খসড়া জমা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের বোর্ড সভায় পর্যালোচনার পর চলতি মাসেই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে রিভাইভাল ও ইকোমিলির শীর্ষ কর্মকর্তারা ঢাকায় এসে আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

কারখানা পুনরায় চালু হলে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান পুনঃপ্রাপ্ত হবে, যা সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিল্পখাতে সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইকোমিলি, যার মাধ্যমে প্রথম ধাপে ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা দেওয়া হবে; প্রয়োজন হলে তা ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

একসময় দেশের টেক্সটাইল খাতের শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল বেক্সিমকো টেক্সটাইল। তিন দশক সফল উৎপাদনের পর ঋণসংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো শ্রমিক চাকরি হারান এবং আশপাশের এলাকার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়। রিভাইভালের বিনিয়োগকে সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রিভাইভাল জানিয়েছে, কারখানাটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হবে, পুরোনো ব্যবস্থাপনা দলকে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আগের শ্রমিকদের পুনর্বহাল করা হবে। জাপানি–বাংলাদেশি মালিকানার কারণে জাপানের শৃঙ্খলাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জাপান থেকে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা আনা হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একটি বৈশ্বিক বিগ ফোর অডিট ফার্ম নিয়োগের পরিকল্পনাও রয়েছে।

কারখানা পুনরায় চালু হওয়ার পাশাপাশি রিভাইভাল বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও ফ্যাশন শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তর আনতে চায়। তারা বেক্সিমকোর পূর্বের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবে এবং নতুন বৈশ্বিক অংশীদার যুক্ত করবে। রিভাইভালের লক্ষ্য শুধু উৎপাদন নয়, বাংলাদেশকে সৃজনশীলতা ও ডিজাইন-ভিত্তিক ব্র্যান্ড উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তাদের স্লোগান— ‘লোকালি ডিজাইন, সেল গ্লোবালি’।

এ উদ্দেশ্যে দেশে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট কোর্স এবং তরুণদের জন্য প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন ইনস্টিটিউট গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণ দেবেন।

রিভাইভালের সিইও হুদা মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, এটি শুধু একটি কারখানা পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নয়, বরং হাজারো পরিবারের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। ইকোমিলির প্রেসিডেন্ট ড. ফারহান এস. করিম বলেন, এটি ব্রেইন ড্রেইনের গল্প নয়, ব্রেইন গেইনের গল্প; দেশের শিল্পে নতুন প্রাণ দিতে পেরে আমরা গর্বিত।

বেক্সিমকো লিমিটেডের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, বন্ধ হওয়ার আগে ৪২ হাজার কর্মীর চাকরি রক্ষা ও রপ্তানি ধরে রাখা ছিল চ্যালেঞ্জ। রিভাইভালের উদ্যোগ কারখানাটিকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উৎপাদন শুরু হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। রিভাইভালের আশা, ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে, যা বকেয়া ঋণ পরিশোধ ও শিল্পটির স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement