রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন: সত্যিই কি দেশে ফিরছেন শেখ হাসিনা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন: সত্যিই কি দেশে ফিরছেন শেখ হাসিনা? ছবি : সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১১:৪৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর ভারতে আশ্রয় নিলেও সেখান থেকেই অনলাইনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছেন তিনি।

প্রায় প্রতিদিনই তিনি নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং তার সমর্থকদের আশ্বাস দিচ্ছেন শিগগিরই বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল মনে করছেন, তার এসব বক্তব্য এখন পর্যন্ত কেবলই ‘কাগুজে বাঘ’ প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও তাদের ঘনিষ্ঠ মহল আবারও নতুন করে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে দুর্গাপূজার পর কলকাতা থেকে হাসিনার দেশে ফেরার উদ্যোগ নেওয়া হবে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের গুম, খুন ও দমননীতিকে পাশ কাটিয়ে তাকে পুনরায় রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত ও তাদের ঘনিষ্ঠ এজেন্সিগুলো। এ লক্ষ্যে সক্রিয় করা হয়েছে আওয়ামীপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে। ফলে প্রশ্ন জাগছে-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি সত্যিই দেশে ফিরছেন, নাকি এটি কেবল আরেকটি রাজনৈতিক নাটক?

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকা। অভিযোগ উঠেছে, হাসিনার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ‘র’ সরাসরি মাঠে নেমেছে। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এক সম্মেলনকেও অনেকে এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবহীন কমিউনিস্ট নেতা গৌতম রায়, যিনি হাসিনার প্রশংসা করতে গিয়ে তার সাদাসিধে জীবনযাত্রাকে সুফিয়া কামাল, সুচিত্রা মিত্র ও গৌরী আইয়ুবের সঙ্গে তুলনা করেন।

শুধু রাজনৈতিক সম্মেলন নয়, ডিজিটাল মাধ্যমেও হাসিনার পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের একটি ওয়েবপোর্টাল নিয়মিতভাবে আওয়ামী সমর্থিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। অভিযোগ আছে, এ কাজের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন পোর্টালের পরিচালক। একইসঙ্গে ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সারদেরও মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে হাসিনার পক্ষে পোস্ট করানো হচ্ছে।

এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও বাংলাদেশের একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ তৈরি করছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যচাপে জর্জরিত। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের প্রত্যাশিত প্রভাব কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তবুও দিল্লিতে আওয়ামী নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং হাসিনার ঘনিষ্ঠ কলকাতার কয়েকজন বুদ্ধিজীবীও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পূজার পর তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে নতুন প্রচারণা জোরদার করতে পারে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

এ প্রচারণার অংশ হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ভুয়া ভিডিও, বিকৃত তথ্য ও পুস্তিকা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কলকাতা, দিল্লি ও ঢাকার বিভিন্ন মহলে।

সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ঘিরে ভারতীয় মিডিয়া, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের কার্যকলাপ নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সত্যিই দেশে ফিরতে পারবেন কিনা-তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই জল্পনার চূড়ান্ত উত্তর সময়ই দেবে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement