জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ জানাল এনসিপি

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ জানাল এনসিপি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০০:২৫, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদে কেন স্বাক্ষর করেনি জুলাই যোদ্ধাদের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—এ বিষয়ে অবশেষে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে দলটি নিজেই।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার কিছু আগে এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দলের অন্যতম নেতা সারোয়ার তুষারের স্বাক্ষরিত একটি দীর্ঘ পোস্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে দলটির অবস্থান, যুক্তি ও শর্তসমূহ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।

পোস্টে শিরোনাম ছিল— ‘এনসিপি কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি?’

বিবৃতিতে বলা হয়,

“এনসিপি জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন রূপরেখা ও বাস্তবায়ন আদেশের (Implementation Order) টেক্সট না দেখে স্বাক্ষর করতে রাজি নয়। কারণ, এনসিপি জুলাই সনদকে কেবলমাত্র কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার কাগজ বা নীতিহীন প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখে না; বরং এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর স্বৈরাচারী ভিত্তি ভেঙে একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দলিল বলে মনে করে। তাই এর স্পষ্ট আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকা অপরিহার্য।”

এনসিপি আরও উল্লেখ করে,

“বিগত এক বছরে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে জুলাই সনদ ও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হয়েছিল। আলোচনার ভিত্তিতে যে প্রক্রিয়া নির্ধারিত হয় তা হলো —
জুলাই সনদ আদেশ → গণভোট → গাঠনিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংসদ (Constituent Parliament),
যার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সনদের অঙ্গীকারনামায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ রাখা হয়নি।”

এ বিষয়ে এনসিপি মন্তব্য করেছে,

“বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উল্লেখ ছাড়া এই সনদে স্বাক্ষর করা মানে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা। অতীতে বহু রাজনৈতিক দল নিজেদের দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে—তাই আমরা কোনো ফাঁকা প্রতিশ্রুতিতে সই করব না।”

পোস্টে দলটি আরও তিনটি জনস্বার্থভিত্তিক শর্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরে:

১️. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট ও গণভোটের প্রশ্ন চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।
২️. প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ওই আদেশ জারি করবেন।
৩️.গণভোটে জনগণ যদি জুলাই সনদের পক্ষে রায় দেয়, তবে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত নোট) কার্যকর থাকবে না। জনগণের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে সংবিধান সংস্কার করবে। সেই সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে — বাংলাদেশ সংবিধান ২০২৬।

বিবৃতির শেষে এনসিপি জানায়,

“উল্লিখিত নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি সুরক্ষিত হবে না বলে আমরা মনে করি। তাই এই বিষয়গুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হলে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে।”

পোস্টের একেবারে শেষাংশে দলটি আরও যুক্ত করে—

“অন্য কিছু দল বাহাত্তরের সংবিধানের মুজিববাদী মূলনীতিকে টিকিয়ে রাখার কারণ দেখিয়ে সনদে সই করেনি। তবে এনসিপির সই না করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন দর্শন ও নীতির ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে, যা সহজেই বোঝা যায়।”

সার্বিকভাবে, এনসিপির এই ব্যাখ্যায় স্পষ্ট যে, দলটি জুলাই সনদকে সমর্থন করলেও ‘বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা’ ছাড়া স্বাক্ষর নয়—এই অবস্থানেই অনড় রয়েছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement