ওরস্যালাইন অতিরিক্ত খেলে হতে পারে মারাত্মক

Published : ০১:২৪, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
ওরস্যালাইন বা ওআরএস (Oral Rehydration Solution) হলো পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত এক অত্যন্ত কার্যকর সমাধান।
ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ঘাম, জ্বর বা গরমে কাজের ফলে শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি দেখা দিলে এটি দ্রুত ঘাটতি পূরণ করে। ওআরএসে উপস্থিত গ্লুকোজ, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হৃৎপিণ্ড, কিডনি ও পেশীর স্বাভাবিক কার্যকারিতা রক্ষা করে।
তবে সমস্যা দেখা দেয় যখন মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিয়মিত বা অতিরিক্ত পরিমাণে ওআরএস গ্রহণ শুরু করে। এর ফলে শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, অতিরিক্ত ওআরএস গ্রহণের কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি নিম্নরূপ:
১. হাইপারনেট্রেমিয়া:
অতিরিক্ত ওআরএস গ্রহণে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে মাথাব্যথা, বমিভাব, বমি, গুরুতর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা মস্তিষ্ক ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
২. ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা:
ওআরএস অতিরিক্ত হলে শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। হাইপারনেট্রেমিয়া বা হাইপারক্যালেমিয়া অবস্থায় ক্লান্তি, পেশী দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি, এমনকি জীবন হুমকিস্বরূপ জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৩. কিডনির ওপর চাপ:
ওআরএসের লবণ কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
৪. উচ্চ রক্তচাপ ও অন্তর্নিহিত রোগের ঝুঁকি:
যাদের উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ বা হৃদরোগ আছে, তাদের জন্য অতিরিক্ত ওআরএস গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ। লবণজনিত কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
৫. রক্তে শর্করা বৃদ্ধি:
ওআরএসে গ্লুকোজ থাকে। অতিরিক্ত গ্রহণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধী ব্যক্তিদের জন্য এটি বিপজ্জনক।
৬. গরম বা খেলাধুলার সময়ে অপব্যবহার:
অনেকে গরমে কাজ বা খেলাধুলার সময় অতিরিক্ত ওআরএস নেন, মনে করে এতে শক্তি বা সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু এটি অতিরিক্ত হলে পেট খারাপ হতে পারে, ডায়রিয়া বাড়তে পারে এবং ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। প্রকৃত ডিহাইড্রেশন না হলে পানি বা স্পোর্টস ড্রিংকই যথেষ্ট।
৭. ওআরএসের ওপর নির্ভরশীলতা:
গুরুতর ডায়রিয়া, সংক্রমণ বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার ক্ষেত্রে ওআরএস কখনো চিকিৎসার বিকল্প হতে পারে না। অতিরিক্ত নির্ভরতা সময় নষ্ট এবং স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
সচেতনতা ও করণীয়:
কোনো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন বা নিকটস্থ হাসপাতালে যান।
ওআরএসের মাত্রা ও ব্যবহার চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ঠিক করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে অন্তর্নিহিত রোগ থাকলে সতর্ক থাকুন।
সংক্ষেপে, ওরস্যালাইন বা ওআরএস খুবই কার্যকর তবে অতি গ্রহণে বিপজ্জনক। সঠিক মাত্রা ও সময়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। এটি ডিহাইড্রেশনের জন্য সমাধান হলেও সব সমস্যা ও চিকিত্সার বিকল্প নয়।
বিডি/এএন