ভবিষ্যতে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে শিক্ষা খাতে কোনো ধরনের ভ্যাট আরোপ করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন।
তিনি বলেন, বিএনপি কেবল সনদভিত্তিক শিক্ষায় বিশ্বাসী নয়; বরং মানুষের দক্ষতা, নৈতিকতা ও সক্ষমতার ওপর বিনিয়োগকেই অগ্রাধিকার দেয়।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার গুলশানে অবস্থিত আমারী হোটেলে ইয়ুথ কাউন্সিল অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মাহদি আমিন বলেন, বিএনপির দৃষ্টিতে শিক্ষা মানে শুধু ডিগ্রি অর্জন নয়; বরং এমন মানবসম্পদ তৈরি করা, যারা নৈতিকভাবে শক্তিশালী, দক্ষ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম। তিনি উল্লেখ করেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মতো দেশে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু ভাষাগত দক্ষতা ও কাজের উপযোগী প্রশিক্ষণের অভাবে বাংলাদেশ সেই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষার ওপর কোনো ভ্যাট বসানো হবে না। বড় বড় অবকাঠামো নয়, মানুষের ওপর বিনিয়োগই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে ‘ওয়ান টিচার, ওয়ান ট্যাবলেট’ নীতির মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের চিন্তা রয়েছে, যাতে শিক্ষকরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও মানসম্মত শিক্ষা দিতে সক্ষম হন।
ড. মাহদি আমিন স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপির শাসনামলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য ছিল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইয়ুথ কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল সাহাদত বিন জামান। আলোচনায় অংশ নেন ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, শিক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শিখো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহির চৌধুরী এবং সংবাদমাধ্যম সেন্ট্রিস্ট নেশনের প্রতিষ্ঠাতা, কলাম লেখক ও ব্যাংকার শাফকাত রাব্বী।
ববি হাজ্জাজ বলেন, দেশের অর্থনীতি এগোলেও শিক্ষাব্যবস্থা সেই গতিতে অগ্রসর হয়নি, যা উদ্বেগজনক। তার মতে, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন শিক্ষা সংস্কার, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ সময়ের দাবি।
ইয়ুথ কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল সাহাদত বিন জামান বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেবল একটি প্রযুক্তি নয়; এটি শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং নেতৃত্বের ধরণ আমূল পরিবর্তন করে দিচ্ছে। তরুণদের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এই আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
শিখো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহির চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা সংকট মূলত পরিসরের বিশালতা ও সম্পদের সীমাবদ্ধতার ফল। তিনি জানান, দেশে প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থী, ৬ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক এবং ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ শিক্ষায় সরকারি ব্যয় জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে এই বিশাল চাহিদা পূরণকে কঠিন করে তুলেছে।
শাফকাত রাব্বী বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চাকরি কমাবে না; বরং এআই বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করা গেলে নতুন ও বৃহৎ কর্মসংস্থানের বাজার তৈরি হবে।
































