দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে ধারাবাহিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামীকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমা নামাজের পর তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এ উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করা হয়েছে এবং চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা-১৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। এ সময় সাভার-আশুলিয়া এলাকা থেকে প্রায় এক লাখ নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার খান আনু বলেন, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। তবে আগামীকাল স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে কি না— সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সকালেই জানানো হতে পারে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক, ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আরাফাতুল ইসলাম জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কর্মসূচিকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। এরপর সেখান থেকে তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরেন তারেক রহমান। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে একটি বিশেষ বাসে করে তিনি রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনায় অংশ নিতে যান। প্রায় ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর তিনি সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। গণসংবর্ধনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে তিনি জনতার ভালোবাসার জবাব দেন এবং সবাই মিলে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বক্তব্যে তারেক রহমান মার্টিন লুথার কিং-এর বিখ্যাত উক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তিনি বলেছিলেন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’, আর আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই— ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি’। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। এক বছর কারাভোগের পর ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি সেখানেই নির্বাসিত জীবন কাটান। দেশে ফেরার পথে আকাশসীমায় প্রবেশের পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন, ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’






























