ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আদালতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দিয়েছেন ঘটনার দিন তাকে বহনকারী অটোরিকশার চালক মো. কামাল হোসেন (৪৬)। তিনি ছিলেন পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামসেদ আহমেদের আদালতে মো. কামাল হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন করেন, যা আদালত মঞ্জুর করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন শহিদ শরিফ ওসমান হাদি মো. কামাল হোসেনের অটোরিকশায় করে মতিঝিলের খলিল হোটেল এলাকা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। যেহেতু কামাল হোসেন পুরো ঘটনাটি নিজের চোখে দেখেছেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদালতে বক্তব্য দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাই তার জবানবন্দি রেকর্ড করা অত্যন্ত জরুরি বলে তদন্ত কর্মকর্তা মত দেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে কামাল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন তিনি দুই যাত্রী নিয়ে মতিঝিল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্দেশে রওনা দেন। পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে পৌঁছানোর পর একটি মোটরসাইকেল তার অটোরিকশার একেবারে কাছ দিয়ে যায়। মোটরসাইকেলে থাকা দুজনের একজন হঠাৎ করে খুব কাছ থেকে তার এক যাত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলির সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীটি অটোরিকশার ভেতরেই লুটিয়ে পড়েন। তিনি চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তিনি জানতে পারেন, গুলিবিদ্ধ যাত্রীর নাম ছিল শরিফ ওসমান হাদি।
প্রসঙ্গত, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে মাথায় গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর, ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় ফয়সাল করিম মাসুদকে প্রধান আসামি করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। মামলার এজাহারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা ফয়সাল করিম মাসুদসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এতে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনাকারী, অর্থের জোগানদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদেরও দায়ী করা হয়। পরে হাদি মারা গেলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
হাদিকে গুলি করার ঘটনায় এরই মধ্যে ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে র্যাব। তবে এখনো প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।


































