লাখ লাখ ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে, আর ভিডিও অপসারণের তালিকায় বাংলাদেশও উঠে এসেছে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে।
গুগলের সদ্য প্রকাশিত Transparency Report দেখার পর পরিষ্কার হয়েছে যে ইউটিউব এখন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও কঠোরতা আরোপ করছে। মাত্র তিন মাসে—২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুন—প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিপুলসংখ্যক চ্যানেল, ভিডিও এবং মন্তব্য।
ইউটিউবের এই উদ্যোগে দেখা গেছে, মোট ২১ লাখেরও বেশি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, একটি চ্যানেল টার্মিনেট হলে সেই চ্যানেলের প্রতিটি ভিডিওও স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়।
চ্যানেল বন্ধের পেছনে মূলত যে কারণগুলো পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল স্প্যাম, প্রতারণামূলক কনটেন্ট এবং বিভ্রান্তিকর কার্যক্রম। প্রায় ৭৬ শতাংশ চ্যানেল এই অভিযোগেই টার্মিনেট হয়েছে। এরপর রয়েছে শিশু নিরাপত্তা লঙ্ঘন (৭.৫ শতাংশ), যৌন বা অনুপযুক্ত কনটেন্ট (৬.১ শতাংশ), এবং এর বাইরে ভুল তথ্য, সহিংসতা ও হয়রানিমূলক কনটেন্টসহ অন্যান্য কারণ।
ভিডিও অপসারণের ক্ষেত্রেও ইউটিউব কঠোরতা বহুগুণে বাড়িয়েছে। তিন মাসে সরানো হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ ভিডিও। এর মধ্যে প্রায় পুরোটাই শনাক্ত করেছে ইউটিউবের নিজস্ব অটোমেটেড সিস্টেম। ব্যবহারকারীর রিপোর্ট বা প্রতিষ্ঠানগুলোর রিপোর্টের মাধ্যমে অপসারিত কনটেন্টের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। এটা বোঝা যায় যে ইউটিউব এখন দ্রুততম সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভিডিও শনাক্ত করতে সক্ষম।
অন্যদিকে, অপসারিত ভিডিওগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এমন অবস্থায় ছিল যেখানে ভিডিওটির কোনো ভিউ ছিল না। আবার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছিল ১ থেকে ১০ ভিউ পাওয়া ভিডিও। অর্থাৎ, ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই ইউটিউব সেগুলো সরিয়ে ফেলেছে।
ভিডিও অপসারণের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে শিশু নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়, যা মোট সরানো ভিডিওর প্রায় ৬০ শতাংশ। এরপর রয়েছে ঘৃণামূলক আচরণ, হয়রানি, ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড, সহিংসতা এবং গ্রাফিক কনটেন্ট।
দেশভিত্তিক ভিডিও অপসারণ তালিকা অনুযায়ী শীর্ষে রয়েছে ভারত। তারপর ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার ভিডিও সরানো হয়েছে যা তালিকার উচ্চ অবস্থান নির্দেশ করে।
মন্তব্য অপসারণের ক্ষেত্রেও বিস্ময়কর পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। একশত কোটিরও বেশি মন্তব্য ইউটিউব মুছে ফেলেছে। এর প্রায় সবকটি শনাক্ত করেছে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম। মানুষ দ্বারা শনাক্ত ও রিপোর্ট করা মন্তব্যের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। অপসারিত মন্তব্যগুলোর বেশিরভাগই ছিল স্প্যাম, বিভ্রান্তিকর বার্তা বা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড। এছাড়া ঘৃণা, হয়রানি, শিশু নিরাপত্তা এবং ভুল তথ্য ছড়ানো মন্তব্যও বড় অংশ দখল করেছে।
সব মিলিয়ে ইউটিউব স্পষ্ট করে দিয়েছে—নিয়ম ভঙ্গ করলে কোনো কনটেন্ট নির্মাতা ছাড় পাবেন না। স্প্যাম, প্রতারণামূলক তথ্য, শিশু নিরাপত্তা লঙ্ঘন, যৌন বা সহিংস কনটেন্ট—সবকিছু আরও দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্ল্যাটফর্মটি।
কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য বার্তা হলো: নীতিমালা না মানলে চ্যানেল টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। আর দর্শকদের জন্য এটাও স্বস্তির যে, প্ল্যাটফর্ম এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে উঠছে।
পরিশেষে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ম ও মান বজায় রেখে কনটেন্ট তৈরি করা এবং নিজের ব্র্যান্ড গড়ে তোলাই দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিতে পারে।


































