পলিনেট হাউসে সবজির চারা উৎপাদনে বছরে আয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা

পলিনেট হাউসে সবজির চারা উৎপাদনে বছরে আয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২৩:৫১, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কুটিপাড়া গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে ভিন্ন দৃশ্য একখণ্ড জমি। সেই জমি সারা বছর থাকে সবুজে মোড়া।

শীতের সবজি ফলাছে গ্রীষ্মে, আবার গরমের সবজি দেখা যাচ্ছে শীতকালে। ঋতু চক্র মৌসুমের নিয়ম ভেঙে এই পরিবর্তন এনেছে গ্রামের এক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা।

আধুনিক পদ্ধতির আপডেট স্মার্ট অ্যাগ্রো নামে ‘পলিনেট হাউস’ তৈরি করে তিনি কৃষিতে এনেছে এক নতুন ধারায়। দুই বছর আগে ২০ শতক জমিতে পলিথিন ও সূক্ষ্ম নেট দিয়ে তৈরি নিয়ন্ত্রিত কৃষিঘর নির্মাণ করে সোহেল রানা। ভেতরে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা আর আলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে চারার বৃদ্ধিও থাকে সমানুপাতিক হারে।

মাটির পরিবর্তে তিনি ব্যবহার করেন নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি কোকোপিট। এতে থাকে না মাটিবাহিত রোগ, ভাইরাসের আক্রমণও কম। কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, কোকোপিটে চারার অঙ্কুরোদগমের হার ৯০ শতাংশের বেশি। সার বা কীটনাশক প্রয়োগ লাগে না বললে চলে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করা এই উদ্যোগ এখন তাঁর আয়ের প্রধান উৎস। বছরে ২০ লক্ষাধিক চারা উৎপাদন করেন তিনি। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা লাভ হয় তার। শুধু তাই নয়, আগের মতো জমি আর খালি পড়ে থাকে না।

নীলফামারীসহ আশপাশের জেলাগুলোয় নিয়মিত যাচ্ছে এসব চারা। সোহেল বলেন, শুরুতে জানতাম না পলিনেট হাউস কতটা ফল দেবে। কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। এখন কোকোপিটে চারার অঙ্কুরোদগম ৯০ শতাংশের মতো। সার-কীটনাশক প্রয়োগ লাগে না বললে চলে। লক্ষ্য হচ্ছে, গ্রামে আধুনিক কৃষি পৌঁছে দেওয়া, যাতে সবাই সারা বছর আয় করতে পারে।

স্থানীয় কৃষকগণ বলেন, পলিনেট হাউসের চারা একসঙ্গে বেড়ে উঠে, মৃত্যুহার কম এবং ফলনও ভালো হয়। আগাম উৎপাদনের সুযোগ থাকায় মুনাফা বাড়ছে। ফলে সারা বছর এখন সবজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। সোহেলের পলিনেট হাউসে প্রতিদিন কাজ করেন ১৫ জন নারী-পুরুষ। আগে মৌসুম ছাড়া কাজ পাওয়া যেত না।

এখন নিয়মিত কাজ করার ফলে আয় হচ্ছে। সংসারের খরচ মেটাতে পারছে। কৃষিবিদগণ বলেন, আবহাওয়া অনিশ্চিত হয়ে উঠায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চারা উৎপাদন কৃষকদের জন্য বড় সুবিধা। রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ চারা উৎপাদনে এই প্রযুক্তি কার্যকর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, সোহেলের উদ্যোগ দেখে অন্য কৃষকেরাও পলিনেট হাউস করতে আগ্রহী হচ্ছে। এটি এলাকায় একটি নতুন ধারা তৈরি করবে। অসময়ের ফসল ফলিয়ে শুধু নিজের আয় বাড়াচ্ছে না সোহেল, পরিবর্তন আনছেন গ্রামের অর্থনীতি ও মানুষের ভাবনায়। প্রযুক্তি ও পরিশ্রম কৃষিতে উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের নতুন পথ।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement