রংপুর অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগে হুমকির মুখে জমির উর্বরতা
Published : ১৫:৪৯, ১০ নভেম্বর ২০২৫
ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমে বাড়ছে। রোগবালাই, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা, উৎপাদনের নিশ্চয়তা ও বৃদ্ধির জন্য শাক-সবজিসহ সকল ফসলি জমিতে মানদন্ড ছাড়াই কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে রংপুর অঞ্চলের কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জমির উর্বরতা, পরিবেশ ও কৃষকদের স্বাস্থ্য।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, জমিতে জৈব সার ব্যবহারের হার উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মাটির স্বাস্থ্য দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর অঞ্চলের গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৭ লক্ষ ৩২ হাজার হেক্টর।
এর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। ফলে মাটির উর্বরতা দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞগণ বলেন, স্বাস্থ্যকর মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু রংপুর অঞ্চলের জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ১ থেকে ১ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে।
এছাড়া ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ জমিতে দস্তার ঘাটতি রয়েছে। ফলে কৃষিজমিগুলোর প্রাণশক্তি হারাচ্ছে দ্রুত। অপরিকল্পিত চাষাবাদ, লাগাতার একই ফসলের চাষ, নগরায়ন, শিল্পায়ন, বন উজাড়, দূষণ ও ইটভাটায় মাটির উপরিভাগ তুলে নেওয়ার কারণে মাটির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ফসলের উৎপাদনও কমে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সুষম সার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ‘খামারী অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছে। কৃষিবিদগণ বলেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার শুধু মাটির ক্ষতি নয়, কৃষকদের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কৃষক কীটনাশকজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন।
এদের মধ্যে চোখ জ্বালা, ত্বকে ফোসকা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার ও প্রজননজনিত জটিলতা দেখা দিচ্ছে। মৃত্তিকা গবেষকরা বলেন, মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
বিশেষ করে গৃহপালিত পশুপাখির বর্জ্য ও গোবর জৈব সার হিসেবে জমিতে গ্রয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়। কৃষিবিদরা বলেন, জমির প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে জৈব সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। সচেতন মহল বলেন, খাদ্যের উৎস স্থান থেকে পরিবহন ও গুদামজাতে রাসায়নিক মেশানো হয়।
এরফলে খাদ্যের উৎস আর নিরাপদ থাকছে না। জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটির ঊর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও কীটনাশক ব্যবহারে অসতর্কতায় হুমকিতে কৃষকের জীবনীশক্তি। বিশেষ করে সবজি ও ধান উৎপাদনে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীট-নাশকের ব্যবহার বেশি হয়।
ফসল উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। এর ফলে খাদ্যের উৎস আর নিরাপদ থাকছে না। উৎপাদন ছাড়াও পরিবহন ও গুদামজাতেও রাসায়নিক মেশানো হয়। এতে সবজি উৎপাদন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।
বিডি/এএন



































