ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বরিশালের ৩৫ হাজার ভবন

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বরিশালের ৩৫ হাজার ভবন ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২২:৫০, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বরিশাল মহানগর বড় ধরনের ভূমিকম্পে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এবং মাঠপর্যায়ের প্রকৌশল কর্মকর্তারা।

সাম্প্রতিক প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) লঙ্ঘন করে নির্মিত হয়েছে ৩৫ হাজারেরও বেশি ভবন। এর বেশিরভাগই নরম, উপকূলীয় পলিমাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ভবন, যা সামান্য কম্পনেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তদন্তে উঠে এসেছে, নগরীর প্রায় সব ওয়ার্ডেই বহুতল ভবন নির্মাণে অবৈধতা, অনিয়ম এবং নিয়মভঙ্গ এক ধরনের ‘স্বাভাবিক’ চর্চায় পরিণত হয়েছে।

মাটি পরীক্ষার নিয়ম উপেক্ষা, অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত তলা নির্মাণ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, ভবনের ন্যূনতম দূরত্ব বজায় না রাখা, খোলা জায়গার অভাব—সব মিলিয়ে বরিশালকে এখন ভূমিকম্পের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দালালচক্র ও তদবিরের মাধ্যমে ভবন অনুমোদনের অভিযোগও রয়েছে।

সম্প্রতি ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বরিশালের বহু ভবনে স্পষ্ট ফাটল দেখা দেয়। দেয়াল, ছাদ এবং পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনের। ১৯৯০ সালে নির্মিত ভবনটি মূলত দুইতলা করার অনুমোদন পেয়েছিল—কিন্তু পরবর্তীতে তা তিনতলাতে উন্নীত করা হয়।

বিসিসির প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেও ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি। ইতোমধ্যে পলেস্তারা খসে পড়া, বিমে ফাটল ও দেয়ালে ক্ষতি—এসব উপসর্গ দৃশ্যমান হয়েছে।

প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সেবা নিতে শত শত মানুষ আসেন, আর ৪২৬ জন কর্মচারী নিয়মিত কাজ করেন।

বিসিসির প্রধান প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, ভবনটি পৌর সময়ের নির্মাণ হওয়ায় নকশা অনুযায়ী কেবল দুইতলা থাকার কথা ছিল। অতিরিক্ত তলা যুক্ত করায় এর স্থায়িত্বে প্রভাব পড়েছে এবং মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও এটি ধসে পড়তে পারে।

বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানিয়েছেন, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

শুধুমাত্র নগর ভবন নয়, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে শহরের অনেক বেসরকারি ভবনেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। সচেতন নাগরিকদের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রুত শনাক্ত করে অপসারণ না করলে ভবিষ্যতে একটি বড় বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।

বরিশাল অধিকারের আঞ্চলিক প্রধান আজিজ সাহিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্রুত সরানো ও নিষ্ক্রিয় করা জরুরি। তা না হলে মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্পেও প্রাণহানির ঝুঁকি ভয়ংকরভাবে বাড়বে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে মোট হোল্ডিং ৫৭,০০০টির মতো। এর মধ্যে টিনশেড বাড়ি ১৭,০০০, ভবন ৪০,০০০ এবং বহুতল ভবন রয়েছে ২০০টির বেশি।

নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে—নরম মাটি, অবৈধ নির্মাণ, নিম্নমানের কাঠামো, ঘনবসতি এবং দীর্ঘদিনের অবহেলা বরিশালকে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে নাজুক করে তুলেছে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পই পুরো নগরজুড়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement