রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিনে ৮ শিশুর মৃত্যু
Published : ১৯:০৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচন্ড শীতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একদিনেই ১৪৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। গত দুই দিনে ৮ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘন কুয়াশা, প্রচন্ড শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
গত কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে হাঁড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় প্রকৃত তাপমাত্রার তুলনায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
মৌসুমের শুরুতেই রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগে। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। হাসপাতালে আসা শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি।
এছাড়া শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রয়েছে। শিশু বিভাগের দুটি ওয়ার্ডে ৮০ শয্যার বিপরীতে গত শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিল ২৪১ জন। শুধু শুক্রবারেই ভর্তি হয়েছে ১৪৪ শিশু। ফলে একটি শয্যায় দুই থেকে তিন শিশুকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। অনেক শিশু হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় অবস্থান চিকিৎসা নিচ্ছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, তৃতীয় তলার ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ৪০ শয্যার বিপরীতে শিশু ভর্তি রয়েছে ১৮১ জন। গত শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে শিশু ভর্তি হয়েছে ৮৪ জন। ফলে শয্যাগুলোতে তিনজন পর্যন্ত রোগী রাখতে হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীদের আলাদা রাখার জন্য ১০টি শয্যা বরাদ্দ রয়েছে।
এর বিপরীতে রোগী ভর্তি হয়েছে ২০ জন। ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ শাহনাজ পারভিন বলেন, শীতজনিত বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত শিশু ভর্তির চাপ বাড়ছে। গত দুইদিনে ওই ওয়ার্ডে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। শয্যা সংকটসহ এত শিশুর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, ৪০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শতাধিক শিশুর। যার মধ্যে শীতজনিত রোগে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৬০ শিশু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ মাস বয়সী যমজ দুই শিশুকে গত সোমবার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তাদের বাবা রংপুরের গঙ্গাচড়ার উমর গ্রামের সুরুজ মিয়া বলেন, ঠান্ডায় শিশু দুটি কাঁশতে কাঁশতে বমি করছিল, রয়েছে শ্বাসকষ্টও।
গত মঙ্গলবার চার মাসের শিশুর শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই ওয়ার্ডে ভর্তি করে রংপুর সদর উপজেলার লাহিরীরহাট এলাকার মাহফুজার রহমান। তিনি বলেন, শিশুর অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় গত শুক্রবার এক দিনের শিশুকে ভর্তি করেছেন লালমনিরহাটের মোগলহাট এলাকার আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, ছোট্ট শিশুর সঙ্গে স্ত্রীসহ তাকেও সময় দিতে হচ্ছে।
কিন্তু এত রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুকে রাখারই জায়গা মেলে না। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আ. ন. ম তানভীর চৌধুরী বলেন, ঠান্ডাজনিত কারণে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এখন শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সীমিত জনবল দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল মোকাদ্দেম বলেন, রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, মাদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন শিশুর শীত না লাগে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন, এবার শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। তিনি শিশুদের পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরিধান করানো এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করা ও ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিডি/এএন






























