রংপুরের তেজপাতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে

রংপুরের তেজপাতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে ছবি: সংগৃহীত

রংপুর প্রতিনিধি

Published : ১৭:৩৯, ৪ অক্টোবর ২০২৫

রংপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে তেজপাতা। কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম বাজেমজকুর। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে তেজপাতার বাগান।

বাড়ির নারী—পুরুষ নির্বিশেষে নিজেরাই তেজপাতা জাষ ও পরিচর্যা শেষে বস্তা ভরে তুলে দেন ব্যবসায়ীদের হাতে। তেজপাতার চাষ শুধু বাজেমজকুর গ্রামেরই নয়।

টেপামধুপুর, চৈতারমোড়, রাজিবসহ বিভিন্ন গ্রামের তেজপাতা বাগান রয়েছে। প্রচলিত ফসলের জমির পাশাপাশি দেখা মিলছে তেজপাতার বাগান। রংপুরে এক সময় অনেকে শখ করে বাড়ির আঙিনায় তেজপাতার গাছ রোপণ করতেন পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য। এখন অবস্থা পাল্টে গেছে। এখন যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই তেজপাতার গাছ চোখে পড়ে।

ধানচাষে লাভ কম হওয়ায় অনেকেই তেজপাতা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কাউনিয়া উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত তেজপাতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ ২১টি দেশে যাচ্ছে। ব্যাপক চাহিদা ও বাজারমূল্য ভালো থাকায় এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মশলার চাষ হচ্ছে।

উপজেলার রাজীব গ্রামের কৃষক আবু সুফিয়ান বলেন, ৬৬ শতক জমিতে ৩৩৩টি তেজপাতা গাছ লাগানো হয়েছে। এতে তার খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি আয় করেছেন ২ লক্ষ টাকা। একই গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগে যে জমিতে ধান, পাটসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করা হতো, এখন সেই জমিতে তেজপাতার বাগান করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ধান, পাট চাষের চেয়ে তেজপাতা চাষে পরিশ্রম ও খরচ কম। এছাড়া এটি লাভজনক। একবার চারা রোপণ করলে জীবনের বেশিরভাগ সময় ফলন পাওয়া যায়। তিনি প্রথম বছর ৩ মণ পাতা বিক্রি করতে পারলেও বর্তমানে ১৬ মণ পর্যন্ত বিক্রি করছেন। আগামী মৌসুমে এর চেয়েও বেশি তেজপাতা বিক্রি করতে পারবেন।

বাজেমজকুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, ধান চাষে লাভ কম, পরিশ্রম বেশি। উপজেলার অনেক কৃষক এখন ধান চাষ ছেড়ে তেজপাতা চাষে মনোযোগী হয়েছে। তেজপাতা বাগান করতে হলে জমিতে নামমাত্র চাষ দিতে হয়। সেখানে জৈব সার ছিটিয়ে এবং সামান্য পরিমাণে রাসায়নিক সার দিয়ে চারা লাগাতে হয়।

তেজপাতা গাছের পাতা ছাগল—গরু খায় না। একটি চারা রোপণের চার বছর পর থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত পাতা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতিটি গাছে বছরে ২৫ থেকে ৪০ কেজি করে পাতা পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকে কেজিপ্রতি কাঁচা পাতা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া চুক্তিতে পুরো বাগানের পাতাও বিক্রি করা যায়।

কাউনিয়া উপজেলা থেকে স্কয়ার গ্রুপ, প্রাণ, পুষ্টি, তীর, ইস্পাহানিসহ বিভিন্ন কোম্পানি তেজপাতা ক্রয় করে নিয়ে যায়। পীরগাছা উপজেলার চৈতার মোড় এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, কাউনিয়া থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ বস্তা তেজপাতা ক্রয় করে ঢাকায় পাঠানো হয়। প্রতি কেজি তেজপাতা ১০৮—১১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি।

ঢাকা থেকে রপ্তানিকারকরা সৌদি আরব, দুবাই. সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ২১টি দেশে পাঠান। কাউনিয়ার তেজপাতার মান ভালো থাকায় চাহিদা বেশি। সারা বছরই তেজপাতা বিক্রি হয়। টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজীব ব্লকের উপ সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসাইন বলেন, টেপামধুপুর ইউনিয়নে ৬০ হেক্টরের বেশি জমিতে তেজপাতা চাষ হয়েছে।

কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না বলেন, গভীর বেলে দোঅঁাশ ও দোঅঁাশ মাটি তেজপাতা চাষের জন্য আদর্শ। চারা লাগানোর ৪—৫ বছর পর থেকে তেজপাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছ থেকে শত বছর পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা যায়। কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার বলেন, কাউনিয়ার বিভিন্ন গ্রামে কয়েকশ বিঘা জমিতে তেজপাতার বাগান রয়েছে।

এসব বাগান থেকে কৃষকেরা প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার পাতা বিক্রি করে থাকেন। অর্থকারী ও মসলাজাতীয় উদ্ভিদ তেজপাতার অনেক ভেষজ গুণ আছে। ভেষজ ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। এ অঞ্চলের আবহাওয়া তেজপাতা চাষের জন্য উপযোগী।

কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের অনাবাদি জমি ফেলে না রেখে ধান, পাট, আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষের পাশাপাশি তেজপাতা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনেক কৃষক প্রচলিত বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি তেজপাতার বাগান করছেন। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা এখন তেজপাতার চাষে ঝুঁকছেন।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement