বাংলাদেশ চীনের জে-১০ সিই বিমান কিনবে ২৭ হাজার কোটি টাকায়

বাংলাদেশ চীনের জে-১০ সিই বিমান কিনবে ২৭ হাজার কোটি টাকায় ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:৩৮, ৭ অক্টোবর ২০২৫

সরকার বাংলাদেশের বিমান বাহিনী আধুনিকীকরণ এবং দেশীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টি-রোল ফাইটার জেট কেনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।

এ চুক্তির সম্পূর্ণ ব্যয় , বিমান ক্রয়, প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে — ধরা হয়েছে প্রায় ২২০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ২৭,০৬০ কোটি টাকা হবে।

গণমাধ্যমে আয়ত্তে থাকা আনুষ্ঠানিক নথিপত্র অনুযায়ী, এই ক্রয় ‘সরাসরি ক্রয়’ বা জিটুজি (Government-to-Government) পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে করা হতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রাখা হয়েছে চলতি ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে। চুক্তির অর্থ পরিশোধ ও অন্যান্য শর্তাবলি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ২০৩৫–২০৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত কিস্তিতে দেওয়ার বিধান থাকতে পারে।

জে-১০ সিই হলো চীনের জে-১০সি মডেলের রপ্তানি সংস্করণ, একটি আধুনিক ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সাজানো সম্ভাব্য হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি জেটের আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি ডলার, ফলে ২০টি বিমান হিসেবে কেবল প্লেনগুলোর মূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার (প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা)। এছাড়া স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও পরিবহন খরচ হিসেবে ৮২ কোটি ডলার (প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা) যুক্ত হবে। বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন ও পূর্ত কাজসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে মোট ব্যয় ২২০ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছায়।

সর্বশেষ কিছুকাল ধরেই জে-১০ সিই আন্তর্জাতিক মহলে নজর কাড়ছে—গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান স্থিতিশীলতায় উত্ত্যক্ততার সময় পাকিস্তান জে-১০ ব্যবহার করে ভারতের রাফায়েল বিমান ধ্বংসের দাবি করেছিল; যদিও independentভাবে তা যাচাই করা যায়নি। এ কারণে জে-১০ সিরিজের সক্ষমতা ও প্রয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনা জাগেছে।

চীনের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল এবং চীন প্রস্তাবটিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে জানা যায়।

পরে এপ্রিল মাসে বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়, যা খসড়া চুক্তিপত্র পর্যালোচনা, জিটুজি পদ্ধতির উপযুক্ততা যাচাই এবং চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষি করে চূড়ান্ত মূল্য-পরিশোধ শর্ত নির্ধারণ করবে। চুক্তিতে বিমান সংরক্ষণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মনিরুজ্জামান বলেন, বিমানবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই আধুনিক জঙ্গিবিমানের প্রয়োজন অনুভব করছে এবং কেনার পরিকল্পনাও ছিল। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক গঠন, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টানাপোড়েন, এর রাজনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করে কৌশলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে মোট ২১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট, সেগুলোর মধ্যে ৩৬টি চীনা নির্মিত এফ–৭ এবং কিছু মিগ-২৯ ও ইয়াক-১৩০ মডেল। জে-১০ সিরিজ যুক্ত হলে তা বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে এবং বহরের প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement