বাকৃবিতে গবেষণা প্রকল্পের উন্নত জাতের ভেড়া চুরি গেল ১৪টি

বাকৃবিতে গবেষণা প্রকল্পের উন্নত জাতের ভেড়া চুরি গেল ১৪টি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৯:৫৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সংঘটিত হয়েছে এক দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক চুরির ঘটনা। বহু বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে উন্নত জাতের ভেড়া ‘দরপার’ ও ‘গাড়ল’ নিয়ে গবেষণা চলছিল। সেই খামার থেকেই তালা ভেঙে ১৪টি ভেড়া চুরি হয়ে গেছে। প্রতিটি ভেড়ার বাজারমূল্য ধরা হয়েছিল ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গেটসংলগ্ন খামার থেকে চুরির ঘটনাটি ঘটে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কখন এটি সংঘটিত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিস্ময়ের বিষয় হলো, ওই রাতে খামারে কোনো প্রহরী দায়িত্বে ছিলেন না।

বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম জানান, দায়িত্বে থাকা দুই প্রহরী বুধবার বিকেল ৫টার পর খামার ছেড়ে চলে যান। ফলে রাতভর খামার সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে এসে দেখা যায়, খামারের দরজার তালা ভাঙা এবং ভেড়াগুলো উধাও। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা শুরু হয়েছে এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার প্রস্তুতি চলছে।

এ ঘটনায় গবেষণার দায়িত্বে থাকা সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন—

“এটা ভেরি মাচ প্যাথেটিক, আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বহু সাধনা ও পরিশ্রমের ফসল যে ‘নিউক্লিয়ার স্লট’ আমরা গড়ে তুলেছিলাম, তা এক মুহূর্তেই ভেঙে গেল।”

তিনি জানান, এই দরপার ও গাড়ল ভেড়ার উন্নত জাত নিয়ে তিনি বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস (বিএএস) গোল্ড মেডেল অর্জন করেছিলেন। চর ও হাওরাঞ্চলে এই ভেড়ার বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। বর্তমানে এ জাতের ওপর ভিত্তি করে তিনটি প্রজনন ও দুটি গবেষণা প্রকল্প চলছিল। প্রতিটি ভেড়ার গড় ওজন ছিল প্রায় ৩০-৪০ কেজি। এখন চুরির পর হাতে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ২-৩টি।

ড. ফরিদা আরও বলেন, ২০১১ সাল থেকে এসব ভেড়ার ওপর গবেষণা চলছে। এখান থেকে সংগৃহীত সিমেন ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিতেন। ফলে চুরির ঘটনায় তার ব্যক্তিগত গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। তিনি উল্লেখ করেন, এর আগেও একবার ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায় ২২টি ভেড়া মারা গিয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অধ্যাপক ফরিদাকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশি সহযোগিতায় ভেড়াগুলো উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি ২০১১ সাল থেকে ভেড়ার ভ্রূণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। দেশে প্রথমবারের মতো তার গবেষণার মাধ্যমেই ভেড়ার ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব হয়। সুপার ওভুলেশনের মাধ্যমে বছরে ২৫-৩০টি উন্নত প্রজাতির কাঙ্ক্ষিত ভ্রূণ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। তার এসব গবেষণা দেশের প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখছে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement