রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক পোষ্যকোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করছেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক পোষ্যকোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করছেন ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:০৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পোষ্যকোটা ইস্যুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এখন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের টানা আন্দোলনের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষকই এই কোটাকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে এর সম্পূর্ণ বিলোপের দাবি তুলেছেন।

গত সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যান। ফলে পুরো ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে।

এর সূত্রপাত ঘটে ১৮ সেপ্টেম্বর, যখন হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে ফিরিয়ে আনা হয় পোষ্যকোটা। ঘোষণার পরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামেন, কয়েকজন শুরু করেন আমরণ অনশন। এতে অসুস্থ হয়ে চারজনকে হাসপাতালে নিতে হয়। টানা উত্তেজনায় ২০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এর প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘোষণা দেন কমপ্লিট শাটডাউন এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করলেও পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সভায় সেটিই বহাল রাখা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, গত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে পোষ্যকোটায় ভর্তি হয়েছেন মোট ৪৪২ শিক্ষার্থী। শুধু ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেই ভর্তি হয়েছেন ৯৪ জন। ওই বছর মেধাতালিকায় ৭৭১তম হয়েও একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি, অথচ সাত হাজারের ওপরে অবস্থান করেও কেউ ভর্তি হয়েছেন শুধু পোষ্যকোটা সুবিধায়।

ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “পোষ্যকোটা কোনো সময়ই যৌক্তিক ছিল না। আমরা শিক্ষকরা নিজের সন্তানদের পড়াশোনার সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে সক্ষম। তাদের পড়ানোর সামর্থ্য আছে, প্রয়োজনে বিদেশেও পাঠাতে পারি। তাই এ কোটা অযৌক্তিক।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুনের মতে, পুরোপুরি বাতিলের পক্ষেও তিনি নন, আবার বর্তমান রূপও সমর্থন করেন না। তার প্রস্তাব, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আলাপসাপেক্ষে কিছু বিশেষ সুবিধা রাখা যেতে পারে।

নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হাবিব জাকারিয়া বলেন, “শিক্ষার্থীরা যখন কোটা বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করে, তখন প্রথম স্বাক্ষর দিয়েছিলাম আমি। এ কোটা থাকার কোনো যুক্তি দেখি না। তাছাড়া রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে এ দাবি আমি স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি না। এর ভেতরে কী রাজনীতি আছে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যা ঘটছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের জন্য মোটেও ভালো নয়। আমি ভীষণ হতাশ।

তিনি আরও বলেন, খুব সুন্দরভাবে ডাকসু, জাকসু নির্বাচন হয়েছে—রাকসুও সেইভাবে হলে সম্মানের হতো। কিন্তু এখন যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকে খাটো করছে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement