ট্রাম্পের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার গাজা যুদ্ধ শেষকরণ, তথ্য-প্রতিবেদন বলছে হামলা বন্ধ হচ্ছে না
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের এক ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরব ও মুসলিম বিশ্বের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে গাজায় অবিলম্বে সংঘাত বন্ধে জোর দিয়েছেন। ট্রাম্প বৈঠকটিকে নিজের “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ” বৈঠক হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে গাজায় যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বৈঠকের দিনভর ও পরের দিনেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা থামেনি, বরং গতকাল বুধবার নাগাদ শহরের আরও গভীর অংশে ভারী বোমাবর্ষণ চালিয়ে অন্তত ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে সংবাদ পদাধিকারের বর্ণনা।
ট্রাম্প বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা গাজার যুদ্ধ শেষ করতে চাই - আমরা এটি শেষ করতে যাচ্ছি, হয়তো এখনই শেষ করতে পারি।” তার এই আহ্বানের একদিন পরে ইসরায়েল উপত্যকাজুড়ে বিমান হামলা, স্থল অভিযান ও শক্তিশালী বিস্ফোরণের মাধ্যমে আক্রমণ বাড়ায়; বিশেষত পূর্ব গাজার ব্যাংক অব প্যালেস্টাইন শাখা পর্যন্ত বোমাবর্ষণ করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই হামলায় বেশ কয়েক শো লোক আহত হয়েছেন এবং অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছে।
একই সময়, গাজার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া ত্রাণবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিয়া’ জানিয়েছে, তাদের বহরের উপর সমুদ্রের কাছে ড্রোন আক্রমণ ঘটেছে, রাতভর গ্রিস উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানকালে বহরের একাধিক জাহাজে বিস্ফোরণ ও যোগাযোগ বিঘ্নের ঘটনা ঘটেছে। ত্রাণদাতা সংগঠনগুলো এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে এবং ঘটনাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বসংস্থাও এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে জবাবদিহির আহ্বান জানিয়েছে। ইতালি ওই ত্রাণবহরকে সহায়তা করার জন্য নৌবাহিনীর একটি ফ্রিগেট পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বৈঠককে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, সেখানে যৌথ ঘোষণার মতো কিছু আসবে এবং তিনি বৈঠকের ফলাফল নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’। তবে বাস্তবে গাজার উপর হামলা ও বোমাবর্ষণ বাড়ায় ঐ বৈঠকের ফলাফল কীভাবে বাস্তবে প্রতিফলিত হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা গভীর রয়েছে, উপত্যকায় প্রতিদিন ডজন ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন এবং বলা হয় হাজার হাজার মানুষের জীবনের অজানা ভবিষ্যতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এ ঘটনাকে নিয়ে তীব্র বার্তা দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সত্যিই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার হন, তাহলে তাকে প্রথমেই গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। মাখোঁ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি শক্তি যা ইসরায়েলকে চাপ দিতে পারে; পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে শিক্ষা দিয়েছেন যে ইউরোপীয় কোনো শক্তিই গাজার যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র করে, এ কারণেই ট্রাম্প এখানে অনন্যভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন।
অপরদিকে, ট্রাম্প বলছেন তিনি নিজে এ বৈঠক ও পরবর্তী কূটনৈতিক উদ্যোগকে সফল মনে করছেন, তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন যে দ্রুত কোনো সমাধান করা যাবে। তবে গাজার মাটিতে চলমান তীব্রহিংসা ও ত্রাণ বহরের ওপর ড্রোন হামলা, শহরাঞ্চলে বন্যায় তুল্য ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রতিদিন হাজার ও হাজার মানুষের স্থায়ী আশ্রয়হীন হয়ে পড়া, এসব পরিস্থিতি প্রকাশ করে যে কূটনৈতিক কথাবার্তার তুলনায় দ্রুততা ও কার্যকর এমন বহু কৌশল প্রয়োজন, যা মাঠেই সম্মিলিতভাবে রূপায়িত হতে হবে।
সংক্ষেপে, নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ঐশ্লেষিক বৈঠকে গাজা যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করার অঙ্গীকার পাকাপোক্ত করা হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি পরিতৃপ্তিকরভাবে বদলায়নি; গাজার ওপর হামলা ও মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে, নানান দেশের পক্ষ থেকে তদন্ত ও ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার ডাক শোনা যাচ্ছে, আর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হচ্ছে।