অবহেলিত এলাকায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে অক্সিজেন পাঠাগার

অবহেলিত এলাকায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে অক্সিজেন পাঠাগার ছবি: বিজনেস ডেইলি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

Published : ১৬:১২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অবহেলিত উপজেলার জনগোষ্টির মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এবং দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বই পড়ার সুযোগ করে দিতে ঠাকুরগাঁও জেলার প্রত্যন্ত ও সীমান্তবর্তী উপজেলা হরিপুরে গড়ে তোলা হয়েছে অক্সিজেন নামের একটি পাঠাগার।

এই পাঠাগারে পাঠক সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও বাড়েনি জ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন নতুন বই সহ ইন্টারনেট সংযুক্তির অনুসঙ্গ।তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে প্রয়োজনীয়  কম্পিউটার,ইন্টারনেট ,টেলিভিশন ইত্যাদির ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ শিক্ষার্থীরা।তাদের দাবি সরকারিভাবে জমি বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থী ও পাঠকদের বসার অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা ঘটাতে।

ভারত বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা একটি উপজেলা হরিপুর।ঠাকুরগাঁও জেলা হতে  প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।উপজেলা শহর হলেও সন্ধার পরপই থেমে যায় পথচারিদের চলাচল এবং নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে সারা এলাকা ।

উপজেলা পরিষদ হতে ২ কিলোমিটার দূরে বটতলী নামক স্থানে রাস্তার পাশে ভাড়া করা জায়গায় গড়ে উঠেছে অক্সিজেন নামের একটি পাঠাগার । শিক্ষার আলো, সংস্কৃতির বিকাশ আর উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়া এই এলাকা।স্কুল কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের বইমুখি করতে এবং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে একঝাঁক তরুণ গড়ে তুলেছে একটি পাঠাগারটি।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নিবন্ধনে অক্সিজেন জ্ঞান সমৃদ্ধ কেন্দ্রটি ২০২০ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে।এখানে ৩ হাজার গল্প,উপন্যাস,কাব্য গ্রন্থ ,ভ্রমন বই, একাডেমিক বই সহ দৈনিক পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রত্যহ বিকেলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এখানে আসে এবং বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করে।এখানে বিসিএস গাইড,সাধারণ জ্ঞান ও চাকুরির পত্রিকা পড়ে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।সেই সাথে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছে পাঠাগারটি।

কিন্তু চাহিদার তুলনায় সৌরজগৎ,বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন বিষয়ে পর্যাপ্ত বই নেই এখানে।নেই শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় বই।নেই পাঠকদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার টেবিল ও খোলামেলা জায়গা।এখানকার পাঠকদের বেশির ভাগই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ।বই পড়ার টানে টানে অনেকে ছুটে আসে দূর দূরান্ত হতে।

সিরাজুম মনিরা,আরিফুল ইসলাম   সহ কয়েকজন পাঠক জানান,চাকুরির নিত্য নতুন বই কিনে পড়া অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়।তাই অনেকেই ছুটে আসি এখানে।বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি এখানে দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়।পত্রিকা পড়ে আমরা দেশ বিদেশে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের খবরাখবর জানতে পারি।

মো: শাওন  বলেন, অক্সিজেন জ্ঞান সমৃদ্ধ পাঠাগারটি সবার জন্য উন্মুক্ত ।

এখানে যে কোন বয়সের মানুষ বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।আমরা চাই ,আমাদের নিজস্ব একটি স্থান যেন হয়।সরকারিভাবে আমাদের এক খন্ড খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হলে আমরা এই পাঠাগারটি খোলামেলা জায়গায় স্থাপন করে প্রান্তিক জনগনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।

অক্সিজেন লাইব্রেরীর কর্নধার ও সভাপতি মোজাহেদুর ইসলাম ইমন বলেন,হরিপুর উপজেলায় কোন সরকারি পাঠাগার নেই।সে প্রয়োজনীয়তা অনুধাবণ করে আমরা অক্সিজেন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি।অক্সিজেন ছাড়া কোন প্রাণী যেমন বাঁচতে পারে না,তেমনি শিক্ষা বা জ্ঞান ছাড়া আমরা মানুষ বলে বিবেচিত হয়না।সে কারণে এলাকার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন প্রকার বইয়ের চাহিদা মেটাতে আমাদের এই প্রয়াস।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন,অক্সিজেন একটি অরাজনৈতিক একটি সংগঠন ।তাদের উদ্যোগে একটি পাঠাগার পরিচালিত হয়।এটি তরুন বয়সের পাঠকদের কাছে একটি জনপ্রিয় পাঠাগার।তরুন বয়সের শিক্ষার্থীরা এখানে নিয়মিত বই পড়তে যাতায়াত করে।

আমরা এই পাঠাগারটি উন্নয়নের জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।পাঠাগারটি আরো বড় করে দেওয়ার  চিন্তা ভাবনা আছে।এজন্য চলতি অর্থ বছরে তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।এছাড়াও তারা খাস জমি চেয়ে আবেদন করলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement