স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও দেহব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগে সানাই

Published : ২৩:৩৯, ৬ আগস্ট ২০২৫
আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী সুপ্রভা মাহবুব বিনতে সানাই মাহবুব স্বামী আবূ সালেহ মূসার বিরুদ্ধে যৌতুক ও দেহব্যবসায় নামানোর জোর চেষ্টার অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী তাকে ২২ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিয়ে আসছেন এবং যৌক্তিক কারণে এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে বাসা থেকে বের করে দেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
সুপ্রভা মাহবুব বিনতে সানাই মাহবুব, পেশায় একজন মডেল ও অভিনেত্রী। বিভিন্ন সময়ে তার কর্মকাণ্ড তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
২০২২ সালের ২৭ মে সানাই মাহবুব ও আবূ সালেহ মূসা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় সানাইয়ের পরিবার থেকে স্বর্ণালংকার (১৫ ভরি), আসবাবপত্রসহ মূল্যবান সামগ্রী দেওয়া হয়, যা এখনও স্বামীর হেফাজতে রয়েছে।
বিয়ের পর আবূ সালেহ মূসা ব্যবসা শুরু করতে এবং ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণে স্ত্রীর পরিবারের কাছে একাধিক দফায় অর্থ দাবি করেন। সানাই তার নিজের সঞ্চিত ১২ লাখ টাকা এবং বাবার কাছ থেকে আরও ৭ লাখ টাকা এনে দেন, মোট ১৯ লাখ টাকা। বাদী অভিযোগ করেছেন, তার স্বামী এই অর্থ অপচয় করে ফেলেন।
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, আবূ সালেহ মূসা পরবর্তীতে আবারও ২২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানালে তিনি স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এমনকি ঋণ পরিশোধের জন্য স্ত্রীকে দেহব্যবসায় বাধ্য করার চেষ্টা করেন।
২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এই নির্যাতনের মাত্রা চূড়ান্ত রূপ নেয়। সেদিন সানাই মাহবুবকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেন আবূ সালেহ মূসা এবং জানিয়ে দেন, যৌতুক না দিলে তিনি আর সংসার করবেন না। পাশাপাশি অন্যত্র বিয়ে করার হুমকি দেন।
সানাই মাহবুবের পরিবার বারবার চেষ্টা করে আবূ সালেহ মূসাকে বোঝাতে। তিনি ২০২৫ সালের ১২ মে সানাইয়ের আফতাবনগরের বাসায় যান, তবে সেখানে ফের যৌতুকের একই দাবি জানান এবং প্রত্যাখ্যানের পর বাসা ত্যাগ করেন। সানাই মাহবুব পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চালানোর পর আইনি পথে হাঁটেন। তিনি গত ৭ ও ২২ জুলাই আবূ সালেহ মূসাকে সংসার করতে আহ্বান জানিয়ে দুটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। প্রথমটির জবাবে আবূ সালেহ মূসা মানহানিকর ও অবমাননাকর বক্তব্য দেন, আর দ্বিতীয়টির কোনো সদুত্তর না দিয়ে ৩১ জুলাই সরাসরি গিয়ে জানিয়ে দেন যে, যৌতুক না দিলে তিনি আর সংসার করবেন না।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালতে এ সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন সানাই মাহবুব। তার আইনজীবী মিঠুন সাহা জানান, আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আসামিকে হাজির হতে সমন জারি করেছেন। মামলায় স্পষ্টভাবে যৌতুক, অর্থ আত্মসাৎ, দেহব্যবসায় বাধ্য করার চেষ্টা এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলার প্রেক্ষাপটে সমাজে যৌতুকবিরোধী আইন ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এসেছে। মামলাটি এখন বিচারাধীন এবং পরবর্তী কার্যক্রমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। সানাই মাহবুব আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সামাজিক সমর্থনও আশা করছেন।