রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আদালতে টানতে চাপ সৃষ্টি করছেন ট্রাম্প

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আদালতে টানতে চাপ সৃষ্টি করছেন ট্রাম্প ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১২:৩৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মূলত রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচারের মুখে দাঁড় করাতে চাপ সৃষ্টি করছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপকে “একনায়কতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়া” বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ডেমোক্র্যাট শিবির।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা পাম বন্ডিকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক তদন্তে নামতে আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।

রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ডিকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা আর দেরি করতে পারি না। এতে আমাদের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতা ধ্বংস হচ্ছে।”

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে যোগ করেন, কিছুই হচ্ছে না। এরপরই সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমি, নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম শিফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, শিফ ছিলেন ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসন বিচারের অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক।

কিছুক্ষণ পর আরেক পোস্টে ট্রাম্প আবারও বন্ডির প্রশংসা করে বলেন, তিনি “অসাধারণ কাজ করছেন।”

এর আগের দিন শনিবার ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ৩০টিরও বেশি বিবৃতি ও পোস্ট পর্যালোচনা করেছেন। যেখানে বারবার বলা হচ্ছে— “একই পুরোনো গল্প, শুধু কথা, কোনো কাজ নেই। কোমি, শিফ, লেটিশিয়া— এরা বড় অপরাধী, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”

অবশ্য ট্রাম্পের এসব বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে ডেমোক্র্যাট নেতারা। সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার সিএনএনকে বলেন, “এটাই একনায়কতন্ত্রের পথ।”

তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ সব সময় নিরপেক্ষ থেকেছে। যে-ই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তারা ভীতিহীনভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অথচ বর্তমান প্রেসিডেন্ট সেটিকে তার রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এ বিষয়ে রোববার প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত নিতে হবে।” একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, “পাম বন্ডি ইতিহাসের সেরা অ্যাটর্নি জেনারেলদের একজন হিসেবে পরিচিত হবেন।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফেডারেল প্রসিকিউটর এরিক সিবার্টের পদত্যাগের একদিন পর ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। তবে ট্রাম্প দাবি করেন, সিবার্টকে তিনি বরখাস্ত করেছেন, কারণ তিনি লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে বন্ধক জালিয়াতির মামলায় পদক্ষেপ নেননি।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সিবার্ট শীর্ষ বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন— জেমসকে অভিযুক্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে নেই। জেমস এসব অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” ও “প্রতিশোধপ্রসূত” বলে উড়িয়ে দেন। ২০২৩ সালে তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলায় জয়ী হয়েছিলেন।

শনিবার ট্রাম্প বলেন, “আমি তাকে বরখাস্ত করেছি। এখানে শক্ত একটি মামলা আছে। বহু আইনজীবী ও বিশ্লেষকও তাই বলছেন।” পরে তিনি বন্ডির প্রশংসা করে জানান, সিবার্টের স্থলে নতুন প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে।

ট্রাম্প আরও বলেন, “তিনি (বন্ডি) অত্যন্ত সতর্ক, বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমী। তবে ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে আমার প্রস্তাবিত কঠোর প্রসিকিউটর লিন্ডসে হ্যালিগানকে নিয়োগ দিতে হবে, যাতে কাজ দ্রুত এগোয়।”

বিবিসি উল্লেখ করে, ১৯৭০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ প্রেসিডেন্টের প্রভাবমুক্ত থাকার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু ট্রাম্প বারবার সেই রীতি ভেঙেছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে বরখাস্ত করেছিলেন। আবার ২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগ মানতে অস্বীকার করায় দ্বিতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার পদত্যাগ করেন।

তাছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন, যার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ছিলেন। 

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement