ডেঙ্গুতে প্রাণহানি দেড় গুণ বেড়েছে, সংক্রমণ দ্বিগুণের বেশি

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত্যু ও সংক্রমণের হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দেড় গুণ এবং আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন ১২৫ জন, আর ২০২৫ সালের একই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৯ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা গত বছর ছিল ২৩ হাজার ১০৮, তবে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮৩১ জনে।

মাসভিত্তিক চিত্র

উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন, জুলাই ও আগস্টে ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যু অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৫ সালের জুনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯৫২, যা আগের বছরের তুলনায় সাত গুণের বেশি।

জুলাইয়ে সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৮৪ জনে, যেখানে গত বছর একই মাসে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ২ হাজার ৬৬৯ জন। মৃত্যুও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮-এ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ।

আগস্টে আক্রান্ত হয় ১০ হাজার ৪৯৬ জন এবং মারা যায় ৩৯ জন। অথচ গত বছরের আগস্টে মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ১২ জনের।

বিশেষজ্ঞ মত

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘চলতি বছরের শুরু থেকেই সমীক্ষায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি থাকার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু কার্যকর কোনো প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস, কার্যকর ওষুধ ছিটানো কিংবা টিকা—কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন কার্যত নিষ্ক্রিয় থেকেছে।’

তিনি আরও জানান, আগাম প্রস্তুতির অভাবেই এ বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

হাসপাতালের পরিস্থিতি

সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেক হাসপাতালে শয্যার দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিনই নতুন রোগী আসছেন। নারী রোগী সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করছি।’

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে বলে আগে থেকেই সতর্ক করা হলেও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের ঘাটতির কারণে পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকদের মতে, কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য খাতে জরুরি সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।