রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছেন বাংলাদেশি যুবক?

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেওয়ার দাবি করে এক বাংলাদেশি তরুণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

ধ্বংসস্তূপের ভেতর যুদ্ধের পোশাকে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণটির নাম নিরব। ভিডিওটি প্রকাশের পর থেকেই নেট দুনিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে আধুনিক অস্ত্র আর মুখভর্তি ক্লান্তির ছাপ নিয়ে নিরব কথা বলছেন তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে। তিনি রাশিয়ার যুদ্ধ সরঞ্জামের কার্যক্ষমতা নিয়ে বিশদভাবে ব্যাখ্যা দেন এবং বর্ণনা করেন কীভাবে তারা শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করে আকাশপথে ও ভূগর্ভস্থ আঘাত হানছেন। নিরবের দাবি—তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই নিয়মিত নিজের ফলোয়ারদের সঙ্গে কথা বলেন এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির আপডেট দেন।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর দেশ-বিদেশে শুরু হয় নানা প্রতিক্রিয়া। কেউ প্রশ্ন তুলেছেন—একজন বাংলাদেশি কেন রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করবেন? কেউ কেউ গর্ব প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছেন ভিডিওর সত্যতা নিয়ে। অনেকে এটিকে বিপজ্জনক প্রবণতার ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন, কারণ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এমন দাবির ঘটনা আগে ঘটলেও এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

নিরবের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে জানা যায়, তিনি চট্টগ্রামের বাসিন্দা। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার স্কুলজীবন শুরু হয়েছিল মুরাদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি ২০০৮ সালের ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধরত বিদেশি যোদ্ধাদের খবর একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সৈন্য সংকটে পড়া রাশিয়া এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণদের আকৃষ্ট করতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে—যার মধ্যে রয়েছে মোটা অঙ্কের বেতন, দ্রুত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ এবং ইউরোপে চাকরির প্রতিশ্রুতি।

অনেকেই এই স্বপ্নের ফাঁদে পা দিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর বুঝতে পারছেন—আসলে তারা এক যুদ্ধের চুক্তিতে সই করেছেন। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন তরুণের মৃত্যুর ও নিখোঁজ হওয়ার খবর বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে। কেউ কেউ চাকরির আশায় রাশিয়া গিয়ে যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ হারিয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।

এই প্রেক্ষাপটে নিরবের ভিডিওটি যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর নাম এখন হাজারো পোস্ট ও মন্তব্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—ভিডিওটির অবস্থান, সময় ও দাবির সত্যতা এখনো নিশ্চিতভাবে যাচাই করা যায়নি। আরটিভি বা অন্য কোনো গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে ভিডিওটির উৎস যাচাই করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সংস্থাও আনুষ্ঠানিকভাবে বলেনি যে সোহেল সরদার নিরব সত্যিই রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছেন। তবুও এই রহস্যময় ভিডিও ঘিরে নেট দুনিয়ায় জল্পনা, উদ্বেগ আর বিতর্কের শেষ নেই।