দীপাবলিতে খেলনা বন্দুকেই অন্ধ ১৪ শিশু

Published : ১৭:১৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের দীপাবলির আনন্দ এবার বহু পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকারের অভিশাপ হয়ে। আলোর উৎসবের রাতে যে বাজির ঝলক ও শব্দে ঘরে ঘরে হাসি ফুটার কথা ছিল, সেই একই বাজিই এবার কেড়ে নিয়েছে শতাধিক শিশুর চোখের আলো।
মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে ‘কার্বাইড গান’ নামের এক বিপজ্জনক দেশীয় বাজি-যন্ত্র ব্যবহার করতে গিয়ে অন্তত ১৪ জন শিশু চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। এছাড়া চোখে গুরুতর আঘাত নিয়ে ১২২ জনেরও বেশি শিশু ভর্তি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে—খবর এনডিটিভির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫০ থেকে ২০০ রুপিতে বিক্রি হওয়া এই ‘কার্বাইড গান’ দেখতে সাধারণ খেলনার মতো হলেও, বিস্ফোরণের সময় এটি ছোট বোমার মতো আচরণ করছে। শিশুরা টিন বা প্লাস্টিকের পাইপে গানপাউডার, দেশলাইয়ের মাথা ও ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে তৈরি করছে এসব বাজি বন্দুক। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সৃষ্ট তীব্র বিস্ফোরণ সরাসরি তাদের মুখ ও চোখে আঘাত করছে, অনেকের চোখের বল পুড়ে গেছে।
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৭ বছরের নেহা হামিদিয়া হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমরা ভাবছিলাম এটা খেলনা বাজি। ফাটানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রচণ্ড আলো আর আগুন বেরিয়ে আসে—আমার চোখ পুরোপুরি পুড়ে যায়, এখন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।”
আরেক আহত কিশোর রাজ বিশ্বকর্মা জানায়, সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও দেখে সে নিজেই বানানোর চেষ্টা করেছিল এমন বাজি বন্দুক, কিন্তু বিস্ফোরণের সময় সেটি মুখের ওপরেই ফেটে যায়।
এখন ভোপাল, ইন্দোর, জবলপুর ও গ্বালিয়রের হাসপাতালগুলোয় চোখের ওয়ার্ড ভর্তি কিশোর রোগীতে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘কার্বাইড গান’ মোটেও খেলনা নয়—এটি একপ্রকার বিস্ফোরক যন্ত্র। হামিদিয়া হাসপাতালের সিএমএইচও ডা. মানীশ শর্মা বলেন, “এই বিস্ফোরণে ধাতব কণিকা ও কার্বাইডের গ্যাস নির্গত হয়, যা সরাসরি রেটিনা পুড়িয়ে দেয়। অনেক শিশুর আইরিস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে গেছে।”
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বিদিশা জেলা, যেখানে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হয়েছে এসব বিপজ্জনক যন্ত্র। পুলিশ ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্ত কর্মকর্তা আর. কে. মিশ্র জানিয়েছেন, কার্বাইড গান বিক্রি বা প্রচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউটিউব শর্টস ও ইনস্টাগ্রাম রিলসে ভাইরাল হওয়া ‘ফায়ারক্র্যাকার গান চ্যালেঞ্জ’ এই বিপজ্জনক প্রবণতাকে উস্কে দিয়েছে। দীপাবলির আনন্দের নামে এই প্রাণঘাতী খেলা এখন গোটা সমাজের জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা।
বিডি/এএন