নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৭:০৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

বন্ধুত্ব মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে বন্ধু হয়ে ওঠে ভরসার নাম, মানসিক প্রশান্তির উৎস। প্রকৃত বন্ধুত্বের ভিত্তি গড়ে ওঠে পরস্পরের আস্থা, সহানুভূতি ও মমতায়।

একাকিত্ব দূর করা থেকে শুরু করে জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা—সব ক্ষেত্রেই একজন সত্যিকারের বন্ধুর ভূমিকা অপরিসীম।

তবে সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের রূপ ও প্রকৃতি বদলে গেছে। এখন বন্ধুত্ব মানে শুধু একসাথে থাকা নয়; বরং ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা নানা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিরন্তর কথা বলা, ইমোজি আর ভার্চুয়াল অনুভূতির বিনিময়। এই আধুনিক বন্ধুত্ব যতটা রঙিন ও সহজলভ্য মনে হয়, ততটাই এর ভেতরে লুকিয়ে আছে সূক্ষ্ম এক নৈতিক সংকট। প্রশ্ন জাগে—ইসলামের দৃষ্টিতে নারী–পুরুষের এমন বন্ধুত্বের জায়গা কোথায়?

ইসলাম কখনো মানবিক সম্পর্ককে অস্বীকার করেনি, বরং সেসব সম্পর্ককে করেছে পরিশুদ্ধ, মর্যাদাসম্পন্ন ও সীমারেখা-নির্ধারিত।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে—এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।” (সূরা আন-নূর: আয়াত ৩০)
আর নারীদের প্রতিও একই নির্দেশনা দিয়েছেন:
“মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা আন-নূর: আয়াত ৩১)

এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায়—শালীনতা কেবল পোশাকে নয়, আচরণ ও মানসিকতায়ও থাকা উচিত। সংযম হচ্ছে চরিত্রের অলংকার, যা মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে বলেছেন,
“যখন কোনো নারী ও পুরুষ নির্জনে থাকে, তখন তাদের তৃতীয় জন হয় শয়তান।” (তিরমিজি, হাদিস ১১৭১)

অর্থাৎ ইসলাম বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ করেনি, তবে সীমাহীন ও অসংযত সম্পর্কের ক্ষেত্রে দিয়েছে কঠোর সতর্কতা।

ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন,
“নারী–পুরুষের অপ্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠতা হৃদয়ের রোগ সৃষ্টি করে, যা পাপের দরজা খুলে দেয়।” (আল-জাওয়াবুল কাফি, পৃ. ১২৪)

ইমাম নববী (রহ.) বলেন,
“যে সম্পর্ক মানুষকে আল্লাহর স্মৃতি থেকে দূরে নিয়ে যায়, তা বন্ধুত্ব নয়, বরং ফিতনার সূচনা।”

বর্তমান যুগের তথাকথিত ‘স্মার্ট ফ্রেন্ডশিপ’ বা ‘বেস্ট ফ্রেন্ড কালচার’ অনেক সময় আবেগের মোহে নৈতিক পতনের কারণ হয়। ভার্চুয়াল কথোপকথনের সূচনা হয় নিরীহভাবে, কিন্তু অজান্তেই তা গড়িয়ে পড়ে পাপের পথে। ইসলাম তাই মানুষকে এ ধরনের সম্পর্কের আবেগীয় ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে শালীনতা ও সংযমের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।

তবে ইসলাম বাস্তবতার দিকও স্বীকার করে। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র বা সমাজসেবায় নারী–পুরুষ একসাথে কাজ করতে পারে, কিন্তু সে সম্পর্ক যেন সবসময় উদ্দেশ্যনির্ভর, সম্মানজনক ও সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

সত্যিকারের বন্ধুত্ব সেই, যা নৈতিকতা ও আত্মার উন্নতি ঘটায়—যা মানুষকে আল্লাহর পথে এগিয়ে নেয়। অন্যথায়, তা হয়ে ওঠে আত্মপ্রবঞ্চনার ফাঁদ।

আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য ইসলামের শিক্ষা একটাই—
অন্যের মন জয় করার আগে নিজের নৈতিকতাকে জয় করো।
বন্ধুত্ব নয়, ভ্রাতৃত্বই ইসলামের ভাষা; যেখানে সম্পর্কের ভিত্তি আবেগ নয়, ঈমান।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement