বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত কেন শক্তি বাড়াচ্ছে?

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত কেন শক্তি বাড়াচ্ছে? ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২২:৪০, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকা ও নয়াদিল্লির সম্পর্কের উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ইসলামাবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উষ্ণতার দিকে এগোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর খবর যোগ করেছে পরিস্থিতির চাপ।

ভারতের মূল ভূখণ্ডকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে মাত্র ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত শিলিগুড়ি করিডোর, যা নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অবস্থানে। এর সংকীর্ণ আকৃতির কারণে এটি ‘চিকেনস নেক’ নামেও পরিচিত। ভারতের অন্যতম সংবেদনশীল ভূ-রাজনৈতিক বিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয় এই করিডোর।

চলতি সপ্তাহে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শিলিগুড়ি করিডোরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কৌশলগত পয়েন্টে তিনটি সামরিক গ্যারিসন স্থাপন করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় কর্মকর্তারা খুঁটিনাটির বিষয়ে নীরব থাকলেও সৈন্য সমাবেশ এবং শক্তি মোতায়েনের যথেষ্ট প্রমাণ দেখা গেছে।

১৫ বছরের শাসনামলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্থিতিশীল সম্পর্ক নিশ্চিত করেছিলেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুতির পর, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।

নয়াদিল্লির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ওআরএফ-এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রধান হর্ষ ভি. পন্ত বলেন, শিলিগুড়ি করিডোর একটি ‘কৌশলগত দুর্বলতা’ যা ভারতকে রক্ষা করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রমবর্ধমান ভারতবিরোধী মনোভাব ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নয়াদিল্লির প্রতি প্রভাবশালী নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে না।

৯ নভেম্বর, আসামে ভারতের বিমানবাহিনী তাদের সর্ববৃহৎ বিমান প্রদর্শনী করেছে। যদিও এটি নিয়মিত মহড়ার অংশ, অনেক বিশ্লেষক এটিকে কৌশলগত বার্তা হিসেবে দেখছেন। একই সময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ নোঙর ফেলেছে, যা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর প্রথম ঘটনা।

পন্ত ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য্য মনে করেন, ভারতের সামরিক পদক্ষেপগুলো প্রতিরক্ষামূলক এবং সংঘাতের উদ্দেশ্য নয়। তবে বাংলাদেশের ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বর্তমানে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ভারতের পক্ষ থেকে বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর সম্পর্ক নিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

ভারতের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাংলাদেশের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সীমান্তে হত্যা, অভিন্ন নদীর জলবণ্টন চুক্তি ব্যর্থ হওয়া, এবং শেখ হাসিনার ভারত সফরের কারণে সম্পর্ক আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে। ইসলামাবাদ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে, বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং নৌসফর ও প্রতিরক্ষা আলোচনার মাধ্যমে সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। এটি বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্য করছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ সবসময় ১৯৭১ সালের ভারতীয় সহায়তা স্বীকার করলেও নিজের স্বার্থকে উপেক্ষা করবে না। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি বোঝার পাশাপাশি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতা ও মর্যাদা বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের আমন্ত্রণে ১৯ নভেম্বর নয়াদিল্লি যাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি কলম্বো নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেবেন। এই সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement