চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আধুনিকায়নের পথে : প্রধান উপদেষ্টা

Published : ১০:৩৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই অংশীদারিত্ব শুধু দুই দেশের জনগণের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার রাতে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন।
তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বছরপূর্তি এবং বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। একইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘমেয়াদি আস্থা, সহযোগিতা ও অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের কল্যাণে অর্জিত অসামান্য সাফল্যের প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, এসব অর্জন শুধু চীনের জনগণের জন্য নয়, বরং গ্লোবাল সাউথসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার উল্লেখ করে তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর ও শক্তিশালী করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ২০২৫ সাল কেবল চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও। তিনি বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে বলেন, চীন সবসময় বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে থাকবে।
রাষ্ট্রদূত জানান, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশটি নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণের ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। একইসঙ্গে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভের প্রতি বাংলাদেশসহ বহু দেশের সমর্থনকে বহুপাক্ষিক সহযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে ঐতিহাসিক মাইলফলক আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, দুই দেশ সর্বদা শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বাধীনতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে চীনের অবদান উল্লেখযোগ্য। এই সহযোগিতা সরাসরি জনগণের জীবনমান উন্নত করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে যে বন্ধন গড়ে উঠেছে তা এখন অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। তার মতে, বর্তমানে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে।
অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞসহ ৬০০-এর বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ইউনান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ ও কোয়ানঝো আর্ট ট্রুপের শিল্পীরা চীনা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, অ্যাক্রোব্যাটিকস ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করেন। উপস্থিত দর্শকরা মনোমুগ্ধকর এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
অতিথিরা এ ছাড়া চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজন করা প্রদর্শনী, জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনের প্রতিরোধ যুদ্ধ ও বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনও পরিদর্শন করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও ছিল এন্টারপ্রাইজ বুথ, পর্যটন প্রচারণা এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কর্নার, যা অতিথিদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
BD/AN