পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে লড়াইয়ে নিহত বাংলাদেশি ফয়সাল

পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে লড়াইয়ে নিহত বাংলাদেশি ফয়সাল ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২০:৩৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর হয়ে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ফয়সাল হোসেন (২২) নামের এক বাংলাদেশি তরুণ।

গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ১৭ টিটিপি সদস্যের মধ্যে ছিলেন ফয়সালও।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই নানামহলে শুরু হয় আলোচনা।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নিহত ফয়সালের পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, পরিবার ভেবেছিল তিনি দুবাই প্রবাসী। পাকিস্তান সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছেলের মৃত্যু হয়েছে—এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোট দুধখালী গ্রামের আবদুল আউয়াল মোড়লের ছেলে ফয়সাল। পরিবার রাজধানীর জগন্নাথপুর এলাকার আজিজ সড়কে বসবাস করে। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান বাবা আবদুল আউয়ালের দুই ছেলে—বড় ছেলে আরমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

নিহতের বড় ভাই আরমান মোড়ল রোববার দুপুরে ফয়সালের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। সোমবার সকালে ফয়সালের মা চায়না বেগম ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি পৌঁছান। তখনও তিনি জানতেন না যে ছেলে মারা গেছেন; শুনেছিলেন, সে দুবাইয়ে অসুস্থ। নানার কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর কথা শুনে তিনি ভেঙে পড়েন। আহাজারিতে বাড়িঘর ভারী হয়ে ওঠে।

চায়না বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, মাত্র দুই মাস আগে ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। ফয়সাল তখন জানিয়েছিল, টাকাপয়সা পাঠাতে পারছে না কিন্তু ভালো আছে। দেশে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু আর ফেরা হলো না।

পরিবার জানায়, ফয়সাল ঢাকার কালাচাঁদপুরের একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। পরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে তসবি, জায়নামাজ, আতর ও টুপি বিক্রি করতো। দুই বছর আগে সে হঠাৎ নিখোঁজ হয় এবং পরে জানায় দুবাই গেছে। এরপর পরিবারের সঙ্গে মাসে এক-দু’বার যোগাযোগ হতো। কিন্তু কয়েক মাস আগে পুলিশ এসে জানায়, ফয়সাল পাকিস্তানে গেছে।

ফয়সালের চাচা আবদুল হালিম বলেন, পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল পরিবার, কিন্তু সফল হয়নি।

দাদা শুক্কুর মোড়ল স্মৃতিচারণ করে বলেন, নয় নাতি-নাতনির মধ্যে ফয়সালই ছিল সবচেয়ে ভালো। নামাজ কখনো বাদ দিত না। নাতির এই পরিণতি তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।

নানা জয়নাল ব্যাপারীও আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ফয়সাল ছিল ধর্মপ্রাণ ও শান্ত ছেলে। কীভাবে এমন পথে গেল, তা বোঝা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাকিস্তানে সংঘর্ষে ওই তরুণ নিহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পরিবার চাইলে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে মরদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করা হবে। একইসঙ্গে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের জঙ্গিবাদে টেনে নেওয়া যে মহলগুলো সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ কাজ করছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement