প্রধান উপদেষ্টা চান মানবাধিকার কর্মীদের নিয়মিত বাংলাদেশ সফর

Published : ০৯:১২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কে তার হোটেল কক্ষে বিশিষ্ট মানবাধিকার রক্ষাকারীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছে উল্লেখ করে তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের বাংলাদেশ সফর আরও ঘন ঘন করার আহ্বান জানান।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের একটি হোটেলে রবার্ট এফ. কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি কেরি কেনেডির নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক হয়, যা চলে এক ঘণ্টারও বেশি সময়। এতে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে কাজ করা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনাদের বারবার বাংলাদেশ সফর করা। প্রতিবার আসলে ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো আবার আলোচনায় ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত জনগণের কণ্ঠস্বর আপনাদের মাধ্যমেই পৌঁছায়।”
তিনি প্রতিনিধি দলকে আসন্ন নির্বাচন, চলমান সংস্কার উদ্যোগ এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত জানান। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা একটি ভেঙে পড়া ব্যবস্থা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছি। গত বছরের হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তাদের প্রতিবেদনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। এরপর আমরা জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি, যা একটি বড় অগ্রগতি।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। অনেক মানুষ ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে এসেছেন। বছরের পর বছর ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে, অনেককেই অজানা কারণে আটক করে রাখা হয়েছিল। যদিও পূর্ণ প্রতিবেদন এখনও প্রকাশিত হয়নি, কমিশন নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ১১টি কমিশন সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে, যার মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোও এতে যুক্ত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অক্টোবরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারের খসড়া তৈরি হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো এতে স্বাক্ষর করবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা চাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ—বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব নির্বাচন। এবার আমরা বিশেষভাবে নারীদের অংশগ্রহণে জোর দিচ্ছি। ভোটদান প্রক্রিয়া নিয়ে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। আমাদের লক্ষ্য সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা।”
তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা কার হয়ে কাজ করছে তা পরিষ্কার নয়, কিন্তু বিপুল অর্থ ঢালছে এবং দেশ-বিদেশে এর সুবিধাভোগী রয়েছে। তারা অত্যন্ত সংগঠিত—এটাই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।”
অধ্যাপক ইউনূস অর্থ পাচার রোধে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকার ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের আইনি প্রক্রিয়া জটিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আওয়াজ তুলতে হবে, যাতে কোনো ব্যাংক এ ধরনের অর্থ গোপন রাখতে না পারে। এগুলো জনগণের টাকা।”
বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা তাসনিম জারা বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছে, যাতে দেশ আর কখনো জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়।
মানবাধিকার কর্মীরা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জন সিফটন বলেন, “যত বেশি সম্ভব সংস্কার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সংসদ গঠনের পরও এই প্রক্রিয়া চলমান থাকে।”
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন—ক্যাথরিন কুপার (রবার্ট এফ. কেনেডি মানবাধিকার সংস্থা), মনদীপ তিওয়ানা (সাধারণ সম্পাদক, সিভিকাস), ম্যাথিউ স্মিথ (প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা, ফোর্টিফাই রাইটস), সাবহানাজ রাশিদ দিয়া (নির্বাহী পরিচালক, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট), ক্যারোলিন ন্যাশ (এশিয়া বিষয়ক পরিচালক, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল), মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান (ভিজিটিং স্কলার, ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়) এবং জেসেলিনা রানা (জাতিসংঘ উপদেষ্টা, সিভিকাস)।
বিডি/এএন