অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে অনেক তেলেসমাতি হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন স্বচ্ছ না হওয়া, নিরীক্ষকদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকারদের চেয়ে অর্থ পাচারকারীরা ‘বেশি স্মার্ট’ হওয়া।
তিনি এ মন্তব্য করেছেন রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি ইন করপোরেট সেক্টর’ শীর্ষক সেমিনারে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “অর্থ পাচার হয় একাধিক লেয়ারের মাধ্যমে। একাধিকবার হাতবদল হয়ে শেষ পর্যায়ে অর্থ পৌঁছে। তারা এত বেশি স্মার্ট যে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকাররা তাদের আটকাতে পারছে না। এ কারণে আর্থিক খাতে তেলেসমাতি হয়েছে। আমি নিজেও লক্ষ্য করছি, কী হচ্ছে আর কী হচ্ছে না। এজন্য নিরীক্ষকদের আরও বেশি দায়িত্ববান ও স্বচ্ছ হতে হবে।”
তিনি সাংবাদিকদেরও অনুরোধ করেন সোশ্যাল অডিট করার মাধ্যমে দেখার জন্য যে সবাই ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। সাংবাদিকদের অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করে সব তথ্যের সঠিক উপস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু ঘটনা-বিবরণ নয়, আর্থিক খাত নিয়ে সঠিক ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। “আমাদের হাতে ম্যাজিক নেই। আমরা নেগেটিভ-পজিটিভ মিলিয়ে অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সবই নিখুঁতভাবে হচ্ছে না, তবে অনেক ক্ষেত্রে ভালো হয়েছে,” মন্তব্য করেন তিনি।
সালেহউদ্দিন আরও বলেন, “এক অনুষ্ঠানে কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এটি ফ্যাসিস্টদের উৎসাহ দিচ্ছে। তবে এই সরকার টাকা অপচয় করেনি, বরং ব্যাংককে স্থিতিশীল করেছে এবং রিজার্ভ বেড়েছে। দেশের বাইরে এখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত ভালো।”
তিনি যোগ করেন, সাধারণ মানুষ ১০০ ডলারের সমপরিমাণও বিদেশে পাঠাতে পারেন না, কিন্তু অর্থ পাচারকারীরা শত কোটি টাকা পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, “আর্থিক খাতে স্বচ্ছতার প্রথম ধাপ হলো নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। অর্থ পাচারকারীরা যেন কোনো নিয়ম না মেনে কাজ করতে পারে, তা বোঝা যায় না।”
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথি। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম এবং সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি দৌলত আকতার মালা।