নির্বাচন ঘিরে ইসির নতুন বিধিমালা জারি

নির্বাচন ঘিরে ইসির নতুন বিধিমালা জারি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৩:৫২, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে বহুল প্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনের তারিখ।

এই প্রেক্ষাপটে সংসদীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ জারি করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নতুন এই নীতিমালা শুধুমাত্র দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। কমিশনের মতে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো—নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম বা ত্রুটি চিহ্নিত করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো এবং ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই নীতিমালা প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নীতিমালা অনুযায়ী, শুধুমাত্র সেইসব বেসরকারি সংস্থা আবেদন করতে পারবে যারা গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে এবং যাদের গঠনতন্ত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন, নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও তথ্য প্রচারের অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আবেদন প্রক্রিয়া অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। আগ্রহী সংস্থাগুলোকে নির্ধারিত ফরম (EO-1) পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে হবে।

তবে যেসব সংস্থার প্রধান নির্বাহী বা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, অথবা যারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তারা নিবন্ধনের অযোগ্য হবেন। আবেদনকারী সংস্থাকে একটি হলফনামা দিতে হবে যে তাদের কোনো সদস্য রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত নন।

এছাড়া, কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নামের মিল থাকলে যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, সেই সংস্থা নিবন্ধনের অযোগ্য বিবেচিত হবে। তবে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে লিখিত অনাপত্তিপত্র থাকলে তা বিবেচনা করা যেতে পারে। পূর্বে যেসব সংস্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন দাখিল করেছে, তাদেরও নিবন্ধন দেওয়া হবে না।

প্রতিটি সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে অনুমোদনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে মেয়াদ শেষে নবায়ন করা যাবে। এই পাঁচ বছরের মধ্যে সংস্থাকে অন্তত একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চারটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি, প্রতি দুই বছর অন্তর একটি দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনও জমা দিতে হবে।

পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। একজন পর্যবেক্ষককে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি বা সমমানের হতে হবে। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা কোনো প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বীর স্বার্থের সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না।

পর্যবেক্ষক মোতায়েনের ইউনিট হবে উপজেলা, মেট্রোপলিটন থানা বা সংসদীয় আসনভিত্তিক এলাকা। তবে কোনো পর্যবেক্ষক নিজ নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরের দিন—মোট তিন দিন পর্যবেক্ষকরা দায়িত্ব পালন করবেন।

নীতিমালা লঙ্ঘন বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে। ১০ দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে বা শুনানিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হবে। এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

নতুন নীতিমালার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আশা করছে, আগামীর জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতা আরও জোরদার হবে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement