৫৬ শতাংশ কোটায় কার কত ভাগ

Published : ১১:১৩, ১১ জুলাই ২০২৪
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার (১০ জুলাই) কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি চলার মধ্যেই বেলা ১২টার দিকে কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ।
এতে এ দিন সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত রাজপথে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
তাদের কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি চলবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নতুন করে কোটার বিষয়টি সামনে এলো। তবে চাকরিতে এই কোটা ব্যবস্থা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেরই প্রশ্ন, আসলে সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা কে কত ভাগ পাচ্ছেন?
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দেশে ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। বাকি ৮০ শতাংশ পদে নিয়োগ হতো কোটায়। ৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়। ৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়।
এর আওতায় ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হলে কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশে।
তবে তথ্য বলছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার বিপুল পদ শূন্য থাকত। একপর্যায়ে উপযুক্ত কোটাধারী না পেলে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৭২ সাল থেকে কোটা ব্যবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে আসছিল। ২০১৮ সালের এক পরিপত্রে ৯ম-১৩তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগে কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হয়।
পরে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে ৯ম-১৩তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগে কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর ৯ম-১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে।
সেখানে বলা হয়, ৯ম গ্রেড (আগের ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়।
এছাড়া নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি ৫ ও প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।
এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বাতিল চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে। গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার আদেশ দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ৪ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে নিয়মিত আপিল করতে বলেন। ফলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল থাকছে।
বিডি/ও