কুমিল্লা–৭ এ এনসিপির তরুণ তুরুপের তাস মীর হাসিব
Published : ১৮:৩২, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কুমিল্লা–৭ (চান্দিনা) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এ বছর যে প্রার্থীকে মনোনীত করবেন বলে ভাবছেন, তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতোমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
উদ্যোক্তা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সামাজিক কর্মী মীর হাসিব মাহমুদ—যিনি কর্পোরেট জগতের নেতৃত্ব থেকে উন্নয়নমূলক প্রকল্প, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সামাজিক সহায়তা কার্যক্রমে একাধারে সক্রিয় ছিলেন—এখন রাজনীতির অঙ্গনে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসছেন।
কর্পোরেট নেতৃত্ব থেকে জনসংযোগ—দীর্ঘ পথচলার অভিজ্ঞতা
মীর হাসিব মাহমুদের পেশাগত যাত্রা শুরু হয় গণমাধ্যমে। এরপর তিনি কর্পোরেট ব্র্যান্ড উন্নয়ন, কৌশলগত যোগাযোগ ও বিনিয়োগ–নেতৃত্বধর্মী কাজে সম্পৃক্ত হন। ক্রমান্বয়ে e-Courier, GoYara, Best Aid Limited এবং Lead Nation Academy (LNA)–এর মতো বড় বড় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানে উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর কাজের মূল ক্ষেত্র ছিল যোগাযোগ কৌশল, ব্র্যান্ডিং, স্টেকহোল্ডার ম্যানেজমেন্ট এবং ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ তৈরি।
এই অভিজ্ঞতা তাঁকে শুধু কর্পোরেট দুনিয়ায় নয়—উৎপাদনশীল মানবসম্পদ, উন্নয়নকেন্দ্রিক সংগঠন, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগেও যুক্ত করেছে। তাঁর কাজের পরিধি জানার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, চান্দিনার মতো একটি এলাকায় যেখানে উন্নয়ন–কৌশল, কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তি–ভিত্তিক পরিবর্তন প্রয়োজন—সেখানে তাঁর মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থী নতুন দিক উন্মোচন করতে পারেন।
সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি
২০২৫ সালে সোশ্যাল অন্ট্রাপ্রেনার ক্যাটাগরিতে জাতীয় এসএমই অ্যাওয়ার্ড অর্জন তাঁর পরিচিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই পুরস্কার সাধারণত সেইসব উদ্যোক্তাকে দেয়া হয় যারা সমাজে বাস্তব পরিবর্তন আনে। ভাসানচরসহ দূরবর্তী অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেয়া এবং তরুণদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট–সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর এই অভিজ্ঞতাগুলো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, কারণ উন্নয়ন–কেন্দ্রিক রাজনীতির জন্য মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এনসিপি–র মনোনয়ন: তরুণদের চাহিদাকে কেন্দ্র করে নেওয়া সিদ্ধান্ত
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়ে তরুণ নেতৃত্ব তুলে ধরার আলোচনা করছিল। এই প্রেক্ষাপটে মীর হাসিব মাহমুদের মনোনয়নকে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দলটির স্থানীয় নেতারা মনে করেন, চান্দিনার মতো এলাকায় প্রতিহিংসা, বিশৃঙ্খলা এবং পুরনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দূর করে উন্নয়ন–কেন্দ্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে একজন প্রযুক্তিবান্ধব, শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ তরুণের নেতৃত্ব প্রয়োজন ছিল। সেই প্রয়োজনটাই পূরণ করেছে এই মনোনয়ন।
মনোনীত হওয়ার পর মীর হাসিব জানান, তাঁর লক্ষ্য রাজনীতিকে সংঘাতের জায়গা থেকে বের করে পরিকল্পনাভিত্তিক উন্নয়নের ধারায় চালিত করা। তিনি চান্দিনায় দীর্ঘদিনের সমস্যা—মাদক, বেকারত্ব, দক্ষতার অভাব এবং অবকাঠামোগত পশ্চাদপদতা—সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেন।
ভোটারদের প্রতিক্রিয়া: আশাবাদ ও সতর্কতা—দুটোই আছে
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে, তরুণ এবং শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে তাঁর মনোনয়নকে ঘিরে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান এবং আধুনিকতার মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে তাঁর বক্তব্য তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
অনেকেই বলছেন, চান্দিনায় বহু বছর ধরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব একই ধাঁচে চলছিল; সেখানে একজন শিক্ষিত, আধুনিক এবং প্রযুক্তিমুখী প্রার্থী নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

তবে একইসঙ্গে বাস্তব রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কুমিল্লা–৭ ঐতিহ্যগতভাবে পুরনো রাজনৈতিক শক্তির দখলে। সেখানে বহু বছর ধরে গড়ে ওঠা ভোট–সংযোগ, দলীয় কাঠামো এবং স্থানীয় প্রভাব বিস্তারের কারণে নতুন প্রার্থীর সামনে কঠিন প্রতিযোগিতা থাকবে—এমনটাও বলছেন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
তাঁদের মতে, মীর হাসিবের জনপ্রিয়তা বা স্বীকৃতি যতই থাকুক, নির্বাচনী মাঠের কঠিন বাস্তবতা হলো সংগঠন, শক্তিশালী গ্রাসরুট টিম এবং ধারাবাহিক মাঠ–কাজই প্রকৃত ফল নির্ধারণ করবে।
গ্রামের সন্তান থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
সুরিখোলা গ্রামে জন্ম নেওয়া মীর হাসিবের শেকড় এখনও সেই গ্রামেই কারণ তাঁর আম্মা চান্দিনার মাটিতেই শুয়ে আছেন। তাঁর কৈশোর কাটে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পরে তিনি সাংবাদিকতায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

পেশাগত জীবন শুরু করেন গণমাধ্যমে, এরপর কর্পোরেট ও উন্নয়ন প্রকল্পে দায়িত্ব পালন। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁকে ‘মাটির কাছাকাছি’ ও ‘পেশাগতভাবে দক্ষ’—দুই পরিচয়ে সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, তাঁর গ্রামীণ পরিচয়ই তাঁকে ভোটারদের কাছে সহজ করে তুলেছে। তিনি স্থানীয় অনুষ্ঠান, সামাজিক কার্যক্রম ও তরুণদের নানা উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
বিশ্লেষণ: পরিবর্তনের সম্ভাবনা কি সত্যিই তৈরি হচ্ছে?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কুমিল্লা–৭ আসনে পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন ছিল—
• নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করা
• কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া
• প্রতিহিংসার রাজনীতির বিকল্প তুলে ধরা
• উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা
মীর হাসিব মাহমুদ সেই চারটি উপাদানের সঙ্গেই রাজনৈতিক মাঠে প্রবেশ করছেন।
তবে তাঁর প্রকৃত সাফল্য নির্ভর করবে—
• মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের শক্তি
• স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক
• দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক যোগাযোগ
• ভোটারদের কাছে ধারাবাহিক উপস্থিতির ওপর
এখন দেখার বিষয়, এনসিপি–র এই তরুণ মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনের আগে কতটা শক্তিশালী টিম গঠন করতে পারেন।

কুমিল্লা–৭ এর ভোটাররা এবার এমন একজন প্রার্থীকে দেখছেন যিনি কর্পোরেট কৌশল, উন্নয়ন প্রকল্প ও সামাজিক নেতৃত্ব—তিনটিই একসঙ্গে ধারণ করেন। তাঁর মনোনয়ন রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনি ভোটারদের মধ্যেও প্রত্যাশা তৈরি করেছে।
তবে এই প্রত্যাশাকে ভোটে রূপান্তরিত করতে হলে তাঁকে মাঠ–পর্যায়ে আরও শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে হবে—এমনই মত বিশ্লেষকদের।
বিডি/এএন

































